আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৮ অক্টোবর: উনিশ বছরেই ১৯ হাজার ফুট শৃঙ্গ জয়। আত্মহত্যা করবেন না। এই বার্তা দিতেই লাদাখের উচ্চতম স্থানে পৌঁছে গেল এমদাদুল হক।
ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান এমদাদুল হক
ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলার মহেশপুর থানার অন্তর্গত খাগড়া গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সেই ছোট। কিন্তু এই বয়সেই উনিশ হাজার তিনশো ফুট ছোঁয়া কম কথা নয়। বোলপুর শান্তিনিকেতনের সেন্ট টেরেজা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ এমদাদুল হক প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর সুউচ্চ স্থান অর্থাৎ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উনিশ হাজার তিনশো ফুট উচ্চতায় লাদাখের উমিং লা পাস পৌঁছান।
চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সাইকেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন তিনি। উত্তরাখণ্ড থেকে ষোলো বছর বয়সী এক বালক হাজার কিমি পথ পাড়ি দিয়ে এই উমিং লা পাস পৌঁছেছে। লাদাখে পৌঁছে সরকারি অনুমতি নিতে হয়েছে তাকে। তবে এমদাদুল পাড়ি দিয়েছে আড়াই হাজার কিমির বেশি পথ। সেক্ষেত্রে “ওয়ার্লড বুক অফ রেকর্ডসে” এমদাদুল অনেকটাই এগিয়ে। উমিং লা পাস পৌঁছনোর পরই ওয়ার্লড বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে সে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে শান্তিনিকেতনের এক বন্ধুর কাছ থেকে সে সাহায্য হিসাবে পেয়েছে অক্সিজেন ক্যান। যদিও সেটি তার কাজে লাগেনি।
এমদাদুল জানায়, সাইকেল চালিয়ে এই যাত্রায় বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে অভ্যস্থ হওয়ায় এই অক্সিজেনের প্রয়োজন তার পড়েনি। তবে, অনেকেই তাকে আর্থিক বা সামাজিকভাবে সাহায্য করেছেন। স্থানীয় স্পনসর হিসেবে বোলপুর বাইকারস ক্লাব, শপিং বাস, রৌনক এন্টারটেইনমেন্ট এবং চৌধুরী অটোমোবাইলস তাকে সামান্য কিছু সাহায্য করেছেন। তার লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলা সাইকেলে পরিভ্রমণ করা। তারজন্য একটু বড়ো স্পন্সর দরকার। এই সাইকেল যাত্রায় তাঁর প্রেরণা মহম্মদ সেলিম খান। তার প্রেরণার ফলে তার মাথায় আসে এরকম অভিযান করার কথা। এব্যাপারে তার বিশেষ ট্রেনিং না থাকলেও সমাজের নতুন প্রজন্মকে বিশেষ বার্তা দিতে তার সাইকেল নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়া। এমদাদুল বলেন, ” নতুন প্রজন্মের মধ্যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ক্ষমতা কমছে। তাই হতাশায় ভুগছে। সেই শ্রেণির প্রজন্মকে প্রেরণা দিতে তার ‘সে নো টু সুইসাইড’ বার্তা।
চব্বিশ দিন সাইকেল যাত্রার মাঝে হোটেলে থাকতে হয়েছে তাকে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মানালি ও লাস্ট স্টে হানলে তে। লক্ষ্যপূরণ করে মিতালি এক্সপ্রেস ধরে কলকাতায় পৌঁছনোর পর, আসানসোল যায় সে। কারণ জম্মু থেকে সাইকেল পার্সেল করে আসানসোলে পাঠানো হয়। আসানসোল থেকে সাইকেল নিয়ে চব্বিশে অক্টোবর সে বোলপুর পৌঁছায়। এমদাদুল জীবনে কষ্ট করেছে প্রচুর। এই বয়সে মুম্বাইয়ে জোমাটো ডেলিভারি বয়ের কাজ করে সে। তারপর শরীর খারাপ হওয়ায় বোলপুর চলে আসে। বেশ কিছুদিন এখানেও ডেলিভারি বয়ের কাজ করে সাইকেলকে ভালো বেসে ফেলে। তাই সেই সাইকেলেকে নিয়ে পাহাড় জয়ের স্বপ্ন পেয়ে বসে তাকে। তার একটাই কথা- মানুষ অনেক ভালো। দুই একটা খারাপ হতে পারে সবাই নয়। বাইরে বেরোলে সেটা দেখা যায়।