পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ৭ আগস্ট: ময়নায় নিহত বিজেপি নেতা বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইঞার তদন্তে গতি বাড়াল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। বুধবার দুপুর নাগাদ এনআইএ’র প্রতিনিধি দল বিশাল বাহিনী নিয়ে মৃত নেতার বাড়িতে এসে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে ধৃতদের নিয়ে এসে কিভাবে খুন হয়েছিলেন বিজয়কৃষ্ণ সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিন এনআইএ’র ডিআইজি, ডিএসপি পর্যায়ের আধিকারীকরা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেন বলে খবর। সূত্রের খবর, আগামী ৫ দিন ময়নার গোড়ামহল গ্রামে ক্যাম্প করেছে এনআইএ। একাধিক সন্দেহভাজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি এলাকাবাসীদের থেকেও অভিযোগ শুনবেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন এনআইএ প্রতিনিধিরা দীর্ঘ সময় ধরেই বিজয়কৃষ্ণর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। সেই সময় কড়া সুরক্ষায় মুড়ে ফেলা হয় চারিদিক। কাউকেই বিজয়কৃষ্ণর বাড়ির আশপাশে ঘেঁসতে দেওয়া হয়নি। এরপরেই তাঁরা কিভাবে বিজয়কৃষ্ণকে মারা হয়েছে তার খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করেন।
বিজেপির মন্ডল সভাপতি উত্তম সিং জানান, “অবশেষে বিজয়কৃষ্ণ’র খুনের ঘটনার তদন্তে জোর দিয়েছে এনআইএ। আমরা তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এই ঘটনার তদন্তে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। এখন এনআইএ ঘটনাস্থলে এসে ধৃতদের দিয়ে সেদিনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। কিভাবে বিজয়কৃষ্ণকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল তাই খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা”।
উত্তমবাবু আরও জানান, “বুধবারও বেলা সাড়ে ১২টার সময় এনআইএ’র ডিআইজি, ডিএসপি পর্যায়ের আধিকারীকরা এখানে এসে তদন্ত চালিয়েছেন। মূলতঃ মৃতদেহ উদ্ধারের জায়গা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ নিয়ে আজ তদন্ত চালিয়েছে”।
সুব্রতবাবু জানান, “আমাদের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আজ ৪ জনকে ক্যাম্পে ডেকে জিজ্ঞাসা চালানো হয়েছে। এই ক্যাম্প চলবে আগামী ৫ দিন। এখানে একদিকে যেমন সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে তেমনই এলাকার সাধারণ মানুষ যদি এই মামলার বিষয়ে কোনও কথা জানাতে চান তা তারা নির্দ্বিধায় জানাতে পারবেন” বলে বিজেপি নেতা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গতঃ গত ২০২৩ সালের ১লা মে বিকেল ৫টা নাগাদ ময়নার বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোড়ামহল গ্রামে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই সময় বিজয়কৃষ্ণ তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের সঙ্গে বাড়ির কাছাকাছি কাজ করছিলেন। দুষ্কৃতীরা ৩ জনকে ফেলে বেধড়ক মারধরের পর ব্যাপক বোমাবাজি করে বন্দুকের গুলি চালাতে চালাতে বিজয়কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর রাতেই বিজয়ের স্ত্রী ও ছেলে ময়না থানায় গিয়ে বিজেপি নেতার নিখোঁজের ঘটনায় অভিযোগ জানায়। সেই সঙ্গে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির নেতা কর্মীরা। পরের দিন বাড়ি থেকে সামান্য দূরে একটি পুকুর পাড় থেকে বিজয়কৃষ্ণর রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার হয়। দেহ নিয়ে সেদিনই তমলুক হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়। যদিও মৃতের পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতায় দেহের দ্বিতীয় বার ময়না তদন্ত হয়। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষাও দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে মাঝে মধ্যেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ময়নায় এসে তদন্ত চালিয়েছে। তবে বিজয়কৃষ্ণর মৃত্যুর ঘটনার এক বছর পর এই প্রথমবার তদন্তে এতটা গতি দেখা গিয়েছে। যা দেখে বিজেপি নেতারা আশা করছেন, এবার এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবেন।
বিজেপি নেতা উত্তম সিংয়ের দাবি, “এই ঘটনায় তৃণমূলের একাধিক রাঘব বোয়াল জড়িত। এলাকা সন্ত্রস্ত করতে যেভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় বিজয়কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে গুলি করে খুন করা হয়েছে তার তদন্তে আমরা খুশি। আজ তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, খুব শীঘ্রই গোটা ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রকারীরা গারদের পেছনে যাবে”।
বিজয়কৃষ্ণ খুনে ধৃত তৃণমূল কর্মী মধুসূদন সাউয়ের বাবা মদন সাউ জানান, “আজ আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। এই খুনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না বললাম। ওনারা আমার ছেলে ও নাতির বিষয়েও খোঁজ করছিল। নাতি বাইরে চলে গেছে কাজের জন্য। ছেলে এখন জেলে আছে ওই মার্ডার কেসের জন্য। আমার ছেলে জড়িত নয়। তবে অভিযোগে আমার ছেলের নাম জড়িয়ে দিয়েছে বলেই সে গ্রেফতার হয়েছে। ১৭ থেকে ১৮ বছরের নাতিকেও ওরা খুঁজছে। আমি কিছুই জানি না এই বিষয়ে”।