শুরু হল কুড়মি সমাজের নতুন বর্ষ 

আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ১৬ জানুয়ারি: বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হল কুড়মালী নববর্ষ ২৭৭০ কুড়মাব্দ। ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত কুড়মি সম্প্রদায় মধু মাস, বিহা মাস, মওহা মাস, নীরন মাস, ধরন মাস, বিহন মাস, রপা মাস, করম মাস, টান মাস, সহরই মাস, মাইসর মাস, জাড় মাস-এই বারমাসে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন।সবগুলোই মূলত প্রকৃতি কেন্দ্রিক।

নববর্ষের প্রথম দিনটিকে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ শুভদিন হিসেবে গণ‍্য করেন এবং এদিন বিভিন্ন শুভকার্যও করে থাকেন।মকরসংক্রান্তিতে টুসু পরব শেষে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ করেন। মাঘ মাসের প্রথম দিন সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণ যাত্রা শুরু করে। এই অক্ষায়ণ থেকেই আইখ‍্যান যাত্রা। কুড়মি সম্প্রদায় প্রকৃতির পুজারী। বছরের প্রথম দিনটিতে মূলত কৃষি কাজের সূচনা করা হয়। যাকে বলা হয় হালচার বা হালপুইন‍্যা।সকালে সারা বাড়িতে গোবর জলের ন্যাতা দিয়ে পরিস্কার করার পর গৃহকর্তা স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষকে লাঙ্গল জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল করে বাড়িতে ফিরে। স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বাড়িতে বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ির বউ। হালচারের গরু বা মোষকে পা ধুইয়ে সিঙে তেল সিন্দুর মাখিয়ে বরণ করে যত্ন করে খাওয়ানো হয়। এভাবেই কৃষিকাজের শুভসূচনা করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ।

পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া তথা জঙ্গলমহল ছাড়াও ওড়িষা, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসম অর্থাৎ সমগ্র ছোটনাগপুরের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করে এই রীতি।

কুড়মি সম্প্রদায়ের শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন,”আমরা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসী, আমরা প্রকৃতির পূজারী, প্রকৃতিরই একটা অংশ কৃষি। কৃষক ছাড়া আমাদের অন্ন যোগানোর বিকল্প নেই। আমরা কৃষি ভিত্তিক তাই আমাদের এই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে আমরা শুভদিন হিসাবেই ধরি এবং এই দিনেই কৃষি কার্যের শুভসূচনা করে থাকি। তাছাড়াও এদিন বিভিন্ন জায়গায় গরাম পূজাও হয়।যাতে গরাম ঠাকুর গ্রামের সকলের মঙ্গল করেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *