বনগাঁর রাজনীতিতে নয়া মোড়, তৃণমূলের ডাক সাইডের নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্যাতিত কংগ্রেস কর্মীদের পাশে

সুশান্ত ঘোষ
বনগাঁ, আমাদের ভারত, ১৯ মার্চ: পুরসভার ভোট মেটার পরেই বনগাঁর রাজনীতিতে নয়া মোড়। তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের পাশে দাঁড়ালেন বনগাঁর পুরসভার তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য ও তাঁর স্বামী প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা শংকর আঢ্য। শুধু তাই নয় তাঁদের হয়ে সওয়াল করতে থানায় ঢুকে গেলেন। এই নিয়ে বনগাঁর রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

বনগাঁর রাজনীতিতে গোপাল শেঠ ও শংকর আঢ্যের নাম বহু পরিচিত। মাঝখানে উঠে এসেছিলেন আলোরানী, কিন্তু তাঁর কথাবার্তা এমনই যে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করতে লাগলেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতি ও দল বিরোধী কথা উঠে এসেছিল। আর তাতেই পুরভোট শেষ হওয়ার পড়েই তাঁকে জেলা সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে গোপাল শেঠকে আনা হয়। অন্য দিকে শংকর আঢ্যের স্ত্রীকে টিকিট দিলেও শংকর আঢ্যকে টিকিটই দেয়নি দল। শংকর আঢ্যের স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য এখন বনগাঁ পুরসভার ভাইস চেয়ার ম্যান। চেয়ারম্যান করা হয়েছে গোপাল শেঠকে। অথচ সম্ভব্য নাম হিসাবে উঠে এসেছিল প্রাক্তন ভাইস চেয়ার ম্যান কৃষ্ণা রায়ের নাম। তিনি এখন চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ, তিনি জেলা সভাপতি গোপাল শেঠকে উদ্দেশ্য করে বলে ছিলেন, এই দলে টাকা দিলেই পদ পাওয়া যায়। বিভাজন শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকে। এবারে বিভাজ আরও স্পট হল। কৃষ্ণা রায়ের অনুগামীরা বলেন, পুরসভা ভোটের দু’দিন আগেই এই জ্যোৎস্না আঢ্য দল বিরোধী অনেক কথা বলেন, গোপাল শেঠকে উদ্দেশ্য করে বলে ছিলেন, ভোট গণনার পর গোপালের চামড়া দিয়ে তবলা বাজাবে তাঁর এলাকার লোকজন। এমনকি তিনি বলেন, পৌরভার উন্নয়নের টাকা বস্তা ভরে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে গোপাল শেঠ। এরপরেও এই গোপাল শেঠ কি করে জ্যোৎস্না আঢ্যকে ভাইস চেয়ার ম্যানের নাম প্রস্তাব করলেন তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কৃষ্ণা রায়ের কথা সত্য ? টাকার কাছে হার মেনেছে গোপাল? নাকি এর পেছনে অন্য কোনও চাপ এসেছে গোপাল শেঠের উপর, তাই জ্যোৎস্না আঢ্যকে ভাইস চেয়ারম্যান করতে বাধ্য হয়েছেন? তার পরেও ফের নতুন চেয়ারম্যান গোপাল শেঠের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তৃণমূলের ডাক সাইডের নেতা শংকর আঢ্য।

অভিযোগ, ভোটের নাম ঘোষণা পর থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি হরিমন্দির দখল করা নিয়ে তৃণমূল ও কংগ্রেসের বিবাদ। শুক্রবার তৃণমূলের ডাক সাইডের নেতা শংকর আঢ্যের ভাই কংগ্রেস নেতা মলয় আঢ্যের অনুগামীরা ওই হরি মন্দির দখল করতে যায়। বনগাঁর চেয়ারম্যান গোপাল শেঠের অনুগামীরা বাঁধা দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে বচসা হয়, পরে হাতাহাতি থেকে লাঠালাঠি হয়। দুই পক্ষের প্রায় ৭ জন জখম হয়। এই নিয়ে দুপক্ষই বনগাঁ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। সেখানেও দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পুলিশ বাঁধা দিতে গেলে পুলিশকে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মী আহত হয় বলে যানা গিয়েছে।

খবর পেয়ে থানায় আসেন ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য ও তাঁর স্বামী শংকর আঢ্য। এদিন শংকর আঢ্য থানায় এসে নিরপেক্ষতা নিয়ে সওয়াল করেন, তিনি বলেন এটা কোনও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না। ১৭ নম্বরে আমার মেয়ে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়ে জয়ী হয়েছে, সেখানে কোনও অভিযোগ নেই। বারবার তিন নম্বর ওয়ার্ডে কেন এতো অভিযোগ? আর এই অভিযোগ কার দেখার দায়িত্ব? ঘরে বসে উকিল পাঠিয়ে দিয়ে খালাস চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। আমি আইসি সাহেবের কাছে অনুরোধ করেছি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক বা ওয়ার্নিং দিক। আমি নিরপেক্ষ বিচার চাই। বনগাঁর মানুষ আজ নিরপেক্ষ বিচার চাইতে থানায় এসেছে। সেখানেও তাদের মারধর করা হয়েছে।

অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে বলেন, গত ৮- ১০ মাস ধরে বনগাঁয় তান্ডব ও সন্ত্রাস চলছে নিজেদের মধ্যে। কেন এই তান্ডব? আমি অনেকবার থামানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু বারবার সাধারণ কর্মীরা মার খাচ্ছে কেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। অন্যদিকে যারা মার খেয়ে থানায় এসেছে, তারা বলছে আমরা ভোটের সময় কংগ্রেস প্রার্থী মলয় আঢ্যের হয়ে কাজ করেছি তাই আমাদের মারধর করেছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।

যদিও এবিষয়ে চেয়ার ম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকে একটা ঝামেলা চলছিল এটা আমার কাছে খবর আসে। আমি পুলিশ পাঠিয়ে মিটিয়ে দিয়েছি। পরে কংগ্রেসের কিছু কর্মী সমর্থকরা ফের সেইখানে ঝামেলা পাকায়। তৃণমূলের ছেলেদের মারধর করে। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। শুনছি আমদের ভাইস চেয়ারম্যান ও তাঁর স্বামী কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট করছে, আমরা এটা হতে দেব না। দলের উপর মহলে জানিয়েছি, দল এর ব্যবস্থা নেবে। স্বাভাবিক ভাবে বনগাঁর রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই ঘটনা। তৃণমূল বনগাঁ পুরসভা দখল করলেও বনগাঁর তৃণমূল এখন তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *