আমাদের ভারত, ২৩ জুলাই: ২৬- এর ভোটের আগে বড়সড় চমক রাজ্য রাজনীতিতে। ভাঙন এবার তৃণমূলে। যে সংখ্যালঘু ভোটার নিশ্চিত করতে সব সময় তৃণমূলের তৎপরতা দেখা যায়। এবার সেই সংখ্যালঘু ভোটেই ভাগ বসাতে নতুন দল গড়ছেন তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ূন কবির। ৫০-৫২টি আসনে প্রার্থী দেবে তাঁর দল বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন।
বাঙালি সংখ্যালঘুদের মন বুঝতে কিছুদিন আগেই আলাদা করে সমীক্ষা করেছিলেন তিনি। তারপরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এককথায় ২৬- এর নির্বাচনের আগে রাজ্যে আরও একটি নতুন দল আসছে। ১৫ আগস্টের পর নতুন দল গড়ার ঘোষণা করেছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। মূলত জেলা নেতৃত্বের বিরোধিতা করেই নতুন দল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মালদা, মুর্শিদাবাদ, ২ দিনাজপুর, নদিয়ার ৫০ আসনে প্রার্থী দেবে হুমায়ুনের দল।
হুমায়ুন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, নেত্রীর নির্দেশ মানছে না মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব। হুমায়ুনের বক্তব্য, তিনি দল করে প্রমাণ করতে চাইছেন চাষ বলদ দিয়েই হয়, ছাগল দিয়ে না।
একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি শুধু মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রিক দল করবো না। মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়ার একটা অংশ ৫০ থেকে ৫২টা সিট নিয়ে দলটা গড়ব। তাঁর কথায়, বলদের পক্ষে লোক রয়েছে, নাকি ছাগলের পক্ষে লোক রয়েছে সেটা একবার ওদের চাক্ষুশ করানোর দরকার রয়েছে।”
হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ মূলত জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে। এক্ষেত্রে তাঁর নিশানায় ফিরহাদ হাকিম, খলিলুর রহমান, অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে। হুমায়ুন বলেন, যারা সভাপতি রয়েছেন তারা সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। কোনো গুরুত্ব আমি পাই না। বিধানসভার ক্ষেত্রেও পাই না। ৬২ বছর ধরে যেখানে থাকি সেই রেজিনগর বিধানসভাতেও গুরুত্ব নেই। আমাদের থেকে যারা অনেক জুনিয়র অপূর্ব সরকার হোক, কিংবা খলিলুর রহমান, তারা গুরুত্ব পাচ্ছেন।
তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ক্ষমতায় আসবেন তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রী চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আমি নেত্রীকে এটা অবগত করার জন্য দলটা করবো। আমার মত লোকের দরকার হয় তো হবে না, কিন্তু ছাগল দিয়ে যে ধান মাড়া হচ্ছে তাতে যোগ্য ভোটার সম্মান পাচ্ছে না। যোগ্য ভোটাররা যাতে সম্মান পান তারই ব্যবস্থা করবো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হুমায়ুনের কথায় স্পষ্ট যে তৃণমূলের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভোট ব্যাঙ্ক এলাকাগুলিতেই লড়াই করবেন। এর আগে বিজেপির টিকিট নিয়ে আড়াই লক্ষ ভোট পেয়েছিল মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে। হুমায়ুন তার ভিত্তিতে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়িয়ে একটি সার্ভে করেছেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে নতুন দল করার চিন্তাভাবনা করছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে রয়েছে ৭০% সংখ্যালঘু ভোট, নদিয়ায় ৩১ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট, উত্তর দিনাজপুরে ৪২ শতাংশ, মালদহে ৫২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট।
তৃণমূল ভোট ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সংখ্যালঘু ভোট। বিরোধীরা বারবারই বলে এসেছেন, যেনতেন প্রকারে তৃণমূল এই নির্দিষ্ট শতাংশ ভোটকে সুরক্ষিত করে। কিন্তু ২৬- এর নির্বাচনে তৃণমূলের মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে নৌওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ। ওরাও একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট কাটবে, আবার হুমায়ুন দল গড়লে সেখানেও কাটার পরিমাণ আরো বাড়বে।
এদিকে হুমায়ুনের এই সিদ্ধান্তের সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের মন্তব্য, পিপিলিকার ডানা গজায় মরিবার তরে। এরকম অনেক রাজনীতিবিদদেরই মনে হয়, কারোর ইচ্ছা হলে দল করতেই পারেন। বিশেষ করে বিজেপি যদি পিছন থেকে টাকা পয়সায় দেয় তাহলে করাতেই পারেন। কিন্তু লাভের লাভ কি হবে সেটা বোঝা যাবে। এভাবে মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না।