আমাদের ভারত, ৮ সেপ্টেম্বর:করোনা রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা চুপিসারে কমে যাচ্ছে কিনা তা চিহ্নিত করতে ছয় মিনিটের হাঁটা পরীক্ষাকে কোভিড চিকিৎসার রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। করোনা রোগীর ক্ষেত্রে “নিঃশব্দ বিপদ” চিহ্নিত করতে এই ৬ মিনিট হাঁটার পরীক্ষা চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে কোভিড কেস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ৬ মিনিট হাঁটার পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে চিকিৎসা পদ্ধতিতে। ইতিমধ্যে এই হাঁটার পরীক্ষাকে মান্যতা দিয়েছে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দপ্তর। এবার সেই পথে এগোতে পারে আমাদের রাজ্য বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গেছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন করোনায় শারীরিক পরিস্থিতি রোগীকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া তার অন্যতম। দেখা যাচ্ছে রোগীর শ্বাসকষ্টের কোন উপসর্গ নেই অথচ চুপিসারে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে সুস্থ রোগীকে হঠাৎ হঠাৎ আশঙ্কাজনক করে তুলছে। এরাজ্যে ৮০% আক্রান্ত হোম আইসোলেশনে বা সেফ হোমে রয়েছেন। সেই সব রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা চুপিসারে কমে যাচ্ছে কিনা তা চিহ্নিত করতে ছয় মিনিটের হাঁটা পরীক্ষাকে কোভিড চিকিৎসার রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে রাজ্য । স্বাস্থ্য দপ্তরে আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল জানান, হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের অসুস্থতা বাড়ছে কিনা তা দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরি। এর জন্য পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে রোগীকে ৬ মিনিট হাঁটতে বলা হয়। ৬ মিনিট হাঁটার পর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বুঝতে হবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার।
তবে অনেক চিকিৎসকদের মতে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে রোগী বিশ্রামে থাকাকালিন তার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু হাঁটার পরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। অসুখ যে বাড়ছে তা বোঝার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারি। তাবে তা দেখার জন্য একেবারে ৬ মিনিট ধরে রোগীকে হাঁটতে হবে তার কোনো মানে নেই। রাজ্যে করণা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ মনে করেন এই পরীক্ষা পদ্ধতির বাস্তব সম্মত প্রয়োগ জরুরী। যারা সেফ হোমে বা হোম আইসোলেশনে রয়েছে তারা সরাসরি কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকছেন না। ফলে এমন হতেই পারে যে ৬ মিনিট হাঁটতে গিয়ে রোগীর শারীরিক সমস্যা হল। অথচ সেই সময় চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত। তাই পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবসম্মত প্রয়োগ জরুরী। তার কথায় রোগী আইসোলেশনে থাকলেও তাকে নিজেকে স্নান নিজের বাসন ধোয়ার মত স্বাভাবিক কিছু কাজকর্ম করতেই হয়। ফলে তার আগে পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে নিলে পরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ অনেক সহজ হয়। তাই এই পরীক্ষার জন্য এমন কিছু ভাবতে হবে যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পক্ষে মানানসই হবে এবং রোগীর জন্য কোনো নতুন বিপদ ডেকে আনবে না।