নবান্ন-রাজভবনে যুদ্ধবিরতি! রেড রোডের পরেই রাজভবনে ধনকর-মমতা বৈঠকে নতুন জল্পনা

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৫ আগস্ট: করোনা আবহে লালকেল্লার মত আড়ম্বরহীন স্বাধীনতা দিবস পালিত হল রেড রোডেও। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের তরফে এদিন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পুলিশের একটি কুচকাওয়াজের পর করোনা যোদ্ধাদের সম্মাননা জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তারপরই রেড রোড থেকে অদূরে সোজা রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী।

শনিবার পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ৯.৪৫টা নাগাদ রেড রোডে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে মঞ্চে ওঠেন। প্রথামাফিক তাঁকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেন কলকাতা পুলিশের অফিসাররা।এরপরই রেড রোডে নেতাজি মূর্তি এবং পুলিশ মেমোরিয়ালে মাল্যদান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে তিনি সোজা চলে যান সোজা রাজভবনে।

আর মমতার এই রাজভবন যাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনার পারদ চড়িয়েছে। তাহলে কি স্বাধীনতা দিবসের সৌজন্যে রাজভবন-নবান্নের দীর্ঘ সংঘাতের ইতি হতে চলেছে। না কি এ কেবলই সৌজন্যমূলক যুদ্ধবিরতি?
রাজভবন সূত্রে খবর, সাধারণ কথাবার্তা ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়। রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনায় তাঁর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সম্প্রতি একের পর ইস্যুতে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত চরমে। করোনা মোকাবিলা থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্র, রাজনৈতিক হিংসা, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সব কিছু বিষয়েই রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করেছেন জগদীপ ধনকর। পালটা রাজ্যের মন্ত্রী-আধিকারিকরাও জবাব দিয়েছেন রাজ্যপালের অভিযোগের। এমনকি নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রীও আক্রমণ করতে ছাড়েননি।

এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজভবনে চা-চক্রের আয়োজন করেন রাজ্যপাল। সেখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিন সেখানে আমন্ত্রিত আছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তবে জানা গিয়েছে, সন্ধেবেলা অন্য কাজ থাকায় সকালেই রাজভবনে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। তবে রাজভবনে দু’জনের মধ্যে কী আলোচনে হয়েছে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে।

অন্যদিকে, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের বার্তাই দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। করোনা আবহে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে অনুষ্ঠিত হল ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। এদিন রাজ্যপাল বলেন, “আমি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক সূত্রে বাঁধা। আমার এবং মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য এক, তা হল উন্নয়ন, শুধুমাত্র কাজের পদ্ধতি আলাদা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানুষের ভালোর জন্যই কাজ করে চলেছেন, আমিও তাই। আমার চলার পথের নির্দেশিকা একটাই, সেই পথ দেখায় একমাত্র দেশের সংবিধান। আমি সংবিধান মেনে চলি। আমি কোনও অবস্থাতেই রাজনৈতিক হিংসা, রক্তপাত পছন্দ করি না। আমি সব সময় চাই মানুষ অহিংস পথে নির্দিষ্ট গতিতে সুখে শান্তিতে জীবন কাটাক। মানুষের ভালোর জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য আমি সব সময় মানুষের পাশে আছি, থাকব। আমার কোনও কথার বিপরীত মানে খুঁজতে যাবেন না। আমরা পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *