আমাদের ভারত, ২৯ জুলাই: দীর্ঘ তিন দশকের শিক্ষানীতি বদলে ফেলে বড়োসড়ো পরিবর্তনের পদক্ষেপ করল মোদী সরকার। বুধবার মন্ত্রিসভায় গৃহীত হল নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। এর ফলে দেশের পড়াশোনায় বড়সড় রদবদল আসতে চলেছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই এই নতুন নীতি প্রণয়ন করতে চাইছে কেন্দ্র।
নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্কুল শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা তো বড়োসড়ো পরিবর্তন হচ্ছে। এবার স্নাতক অনার্স কোর্স তিনের বদলে চার বছরের হতে চলেছে। স্নাতোকোত্তর এক বা দুই বছরের কোর্স পড়ানো হবে। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে পড়ার জন্য পাঁচ বছরের একটি ইন্টিগ্রেটেড কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে।
নতুন শিক্ষানীতিতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ক্ষেত্রেও বদল আসছে। আগে কোন পড়ুয়া চুড়ান্তবর্ষের পরীক্ষা না দিলে পাস করার কোন সুযোগই ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কিছু শিক্ষা থাকলেও কোনো ডিগ্রি না পেয়ে সেই পড়ুয়াটি আউট অফ সিস্টেম হয়ে যেত। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতিতে মাঝ পথে পড়া ছাড়লেও ধাপে ধাপে শিক্ষার মানপত্র পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নতুন শিক্ষানীতিতে এক বছর বাদে শংসাপত্র, দু বছর পর ডিপ্লোমা, তিন বছর কোর্সের পর এক রকম ডিগ্রী সার্টিফিকেট, চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করার পর পুরো ডিগ্রি পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় পড়ুয়ারা বিভিন্ন অসুবিধার কারণে মাঝ পথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু পরবর্তী সময় কোর্স কমপ্লিট করতে চাইলেও তার সুযোগ থাকেনা। নতুন এই শিক্ষানীতিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে এক বা একাধিকবার বিশেষ শর্তে কোর্স ভেঙে বেড়োনোদের পড়ার সুযোগ থাকছে। কোনো পড়ুয়া যদি মাঝ পথে পড়া বন্ধ করা বা পরীক্ষা না দেয় তবুও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরে এসে চাইলে কোর্স শেষ করতে পারবে। তার জন্য তাকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে না। এর জন্য প্রত্যেক পড়ুয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অ্যাকাডেমিক ডিজিলকার-এর ব্যবস্থা করা হবে।
নতুন শিক্ষানীতিতে বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। কোন ছাত্র পদার্থবিদ্যা, রসায়ন নিয়ে পড়লেও সে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ ধর্মী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দিতে চাইছে সরকার অর্থাৎ ডিগ্রির পর পড়ুয়াদের শিক্ষা অনুযায়ী জীবিকা যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে নজর দিতে চেয়েছে সরকার।
এছাড়া কলেজ গুলি কেও আর্থিক দিক থেকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হবে। কলেজ গুলিকে গ্রেডের উপর ভিত্তি করে স্ব-শাসন দেওয়া হবে। ল এবং মেডিকেল ছাড়া বাকি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চলেছে নতুন শিক্ষা নীতি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতেই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা বলে জানিয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রমেশ পখরিয়াল ও প্রকাশ জাভরেকার। তারা বলেছেন গত ৩৪ বছর ধরে দেশের শিক্ষা নীতির কোনো সংস্কার করা হয়নি। একবিংশ শতকের পড়ুয়াদের জন্য নতুন শিক্ষা নীতি একান্ত উপযোগী হতে চলেছে।

