Netizens, Shahbaz Sharif, লাগাতার চলে হিন্দু নির্যাতন! পাক প্রধানমন্ত্রীর দীপাবলির শুভেচ্ছাকে ভন্ডামী- প্রহসন বলে কটাক্ষ নেটিজেনদের

আমাদের ভারত, ২১ অক্টোবর: সাধারণত এমনটা দেখতে পাওয়া যায় না। কোনো উৎসবের শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার পর কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চুড়ান্ত কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের বিষয়টা তো সবসময়ই আলাদা। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটলো। দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন শাহবাজ শরিফ।

দীাবাবলি উপলক্ষে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দেশের হিন্দু নাগরিকদের বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তার এই বার্তাকে ভন্ডামি বলে আক্রমণ করেছেন নেটিজেনরা। শুভেচ্ছা বার্তার পোস্টের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বহু নেটিজেন শরিফকে ভন্ড বলে আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তা পায় না, সেখানে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দীপাবলি উদযাপন করছেন?

এই ক্ষোভের কারণ যথেষ্ট ন্যায্য। পাকিস্তানি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তথ্য বলেছে ২০২৩ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি। তার মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা মাত্র ৩৮ লক্ষ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৬৩ শতাংশ, অথচ প্রাচীনকালে হিন্দু সভ্যতার সময় থেকে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হিন্দুদের বসবাস ছিল সমৃদ্ধ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। এখন তা নেমে এসেছে ২ শতাংশের কাছাকাছি। উদাহরণ হিসেবে লাহোর শহরে ১৯৪১ সালে এই জনসংখ্যা ছিল ৪০ শতাংশ। আজ তা নামমাত্র, ১ শতাংশের কম।

পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা নানা আইনি ও সামাজিক বাধার মুখে পড়েন। সংবিধান অনুযায়ী কেবল মুসলিম নাগরিকরাই হতে পারেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী। ব্লাসফেমি আইন অনুযায়ী ধর্ম নিন্দার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এই আইন অনেক সময়েই সংখ্যালঘুদের ভয় দেখাতেই ব্যবহার করা হয়।

অমুসলিমদের জন্য কোনো পৃথক পারিবারিক আইন নেই, ফলে হিন্দুদের বিবাহ, তালাক এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ আইনি স্বীকৃতি পায় না। প্রতিবছর হাজার হাজার হিন্দু নারী জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হয়। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের জোর করে নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হলেও সেখানে হিন্দুদের জন্য দাসপ্রথা আজও বলবৎ আছে। হিন্দু মহিলারা যৌন নির্যাতনের শিকার।

দেশজুড়ে হিন্দু মন্দিরের অবস্থাও শোচনীয়। দেশভাগের পর থেকে কয়েক হাজার মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এমনকি হিন্দুদের পবিত্র স্থান হিংলাজ মাতার মন্দিরেও সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছে।

২০২৩ সালের দেড়শো বছরের পুরনো মারি মাতার মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয় পুরনো বিপদজনক কাঠামোর অজুহাত দিয়ে।

ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের হিন্দুদের ওপর হিংসার ঘটনা ২০২৩- এ ছিল ১০৩টি। ২০২৪- এ তা বেড়ে ১১২টি হয়। এই পরিস্থিতিতে শরিফ দিওয়ালির শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকের কাছেই কটাক্ষের পাত্র হয়েছেন। অনেকেই মনে করেছেন হিন্দুদের দীপাবলির বার্তা আসলে একটি প্রহসন। সকলেই বলতে চেয়েছেন দেশে যখন সংখ্যালঘু হিন্দুদের ন্যূনতম নিরাপত্তা, মর্যাদা দিতে ব্যর্থ শরিফ সরকার তখন দীপাবলীর শুভেচ্ছা নিছক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *