Nepal, Social media, তরুণদের বিক্ষোভের আগুনে উত্তাল নেপাল! সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জেন-জেডের, মৃ*ত্যু ২১ জনের

আমাদের ভারত, ৮ সেপ্টেম্বর: সোশ্যাল মিডিয়া ইস্যুতে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে উত্তাল নেপাল। ফলে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে কেপি শর্মা অলি সরকার। ইতিমধ্যে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। আহত অন্তত ২৫০।

এই অবস্থায় নেপালের বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। যদি এখনও পর্যন্ত এ বিষয় নেপালের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শুধু খবর, বিরোধীদের ক্রমাগত চাপে আন্দোলন থামাতে না পারায় নেপালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। তবে অন্য একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, হিংসাত্মক বিক্ষোভে প্রাণহানির পর নিজেই পদত্যাগ করতে চেয়েছেন লেখক।

নেপালের কেপি শর্মা অলি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগ ছিল আগেই। সম্প্রতি সে দেশে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স সহ প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আগুনে ঘি পড়েছে। প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে সে দেশেই জেন জি অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম। রাস্তায় নেমে কেপি শর্মা অলি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন তারা। এমনকি উত্তেজিত জনতা সংসদ ভবনের ভিতরেও ঢুকে পড়ে।

বিক্ষোভকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। কাঠমান্ডুর পরে বীরগঞ্জ, ভৈরহওয়া, বুট ওয়াল, পোখরা, ইটাহারি এবং বামকে-তে কারফিউ জারি হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল কলেজ। স্থগিত হয়েছে পরীক্ষা। রাজনৈতিক দলগুলির দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরাতে সব দলকে একজোট হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর নিষিদ্ধ হয় ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, ওয়াটস অ্যাপ সহ প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া। এই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে সরকারিভাবে নথিবদ্ধ হয়নি।সাত দিনের ডেডলাইন দিলেও ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তা মেনে চলেনি। তাই এই কড়া সিদ্ধান্ত নেয় কাঠমান্ডু সরকার।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ক্ষেপে যায় নেপালের তরুণ প্রজন্ম। সোমবার হাজার হাজার প্রতিবাদী কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে। সংসদ ভবন-সহ বহু প্রশাসনিক এলাকায় যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নেই সেখানে ঢুকে পড়েন প্রতিবাদী তরুণরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলেন তারা। এর পরই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শেষে আন্দোলন রুখতে রাজধানী শহরে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। নামানো হয় সেনা। জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গুলিতে ২১জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ২৫০ জন।

নেপালে নিষিদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়ার তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, লিংকডেন, হোয়াটস অ্যাপ, স্ন্যাপ চ্যাট ইত্যাদি। নেপালি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, সমস্ত দেশি ও বিদেশী অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে আগে সরকারের সঙ্গে নথিভুক্ত হতে হবে, যাতে সমস্ত অবাঞ্ছিত কন্টেন্টের উপর নজরদারি চালানো যায়।

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সমস্যা নেপালে নতুন নয়, ২০২০ সাল থেকে বহু পিটিশন জমা পড়েছে লাইসেন্সহীন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন ও কনটেন্ট প্রচার করার অভিযোগে। অবশেষে পদক্ষেপ করে প্রশাসন। তবে সব সোশ্যাল মিডিয়া যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা ঠিক নয়। টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বুজ, টেলিগ্রাম বা গ্লোবালডাইরিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।

বিরোধী দলগুলির দাবি, এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে অন্য উদ্দেশ্য। বিরোধীরা যাতে কোনভাবে এইসব মঞ্চকে ব্যবহার করে প্রতিবাদ না জানাতে পারে তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত বিল পাস করানো হয়েছে। তাকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। একে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার প্রয়াস বলেই দাবি করা হয়েছে বিরোধীদের তরফে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *