আমাদের ভারত, বেলুড়, ১২ জানুয়ারি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশের যুবসমাজকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, বেলুড়মঠে এ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, এই আইন নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়, এই আইন প্রতিবেশী দেশে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, যারা আমাদের দেশের সংবিধান মেনে নেবেন তারাই আমাদের দেশের নাগরিক।
রাজ্যে দুই দিনের সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল তিনি বেলুড়মঠে রাত্রি বাস করেন। স্বামীজি যে কক্ষে থাকতেন সকালে সেখানে গিয়ে তিনি কিছু সময় ধ্যান করেন। এরপর যুবদিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছে এই বেলুড়মঠে আসা তীর্থস্থানে আসার থেকে কম নয়, কিন্তু আমার কাছে তার থেকেও বড়, এটা হচ্ছে আমার ঘরে আসা। তিনি উপস্থিত যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি গুরুদের কাছ থেকে শিখেছি, আমি কখনো একা নই, আমার সঙ্গে আরো একজন আছেন, তিনি ঈশ্বর। এই কথা স্মরণ করিয়ে যুবকদের বলেন তাদেরও মনে রাখতে রাখতে হবে, তারা কেউ একা নন এবং তারাই পারে পারবেন ভারতবর্ষকে ঐশ্বর্যশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে।
এরপর এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। দেশের যুবকদের রাজনৈতিক নেতারা ভুল বোঝাচ্ছেন। তাই আজ স্বামীজীর জন্মদিনে রাষ্ট্রীয় যুব দিবস দেশের যুবক তথা পশ্চিমবঙ্গের যুবকদের বলতে চাই, এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন রাতারাতি করা হয়নি। ভারতবর্ষে যে নাগরিকত্ব আইন আছে তাতে আমরা শুধু একটা সংশোধন করেছি মাত্র। যারা দেশভাগের জন্য পাকিস্থানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়েছে, যেসব মানুষের ওপর জুলুম করা হয়েছে, যাদের মেয়ে, বোনদের ইজ্জত বাঁচানো সম্ভব হয়েছে তাদের জন্য। ধর্মীয় কারণে তাদের জীবন আজ বিপন্ন। তাদের জন্যই আজ এই আইন করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহাত্মা গান্ধী থেকে দেশের বড় বড় নেতা তখন বলেছিলেন পাকিস্তানের যারা ধর্মের কারণে অত্যাচারিত হচ্ছে, সেইসব শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, এইসব শরণার্থীদের কি আমরা ফেরত পাঠিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো? আমাদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? তাদের কি আমাদের দেশের নাগরিক বানানো উচিত নাকি উচিত নয়? এই কাজ করা কি পবিত্র নয়? এই কাজ কি খারাপ, না ভালো? আমরা তো শুধু মহাত্মা গান্ধী যা বলেছিলেন, সেটাই পালন করেছি।
এই নাগরিকত্ব আইন আনা হয়েছে প্রতিবেশী দেশে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, এটা কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। অথচ দেশের রাজনীতির কারবারিরা, যারা রাজনীতি নিয়ে খেলছেন, তারা এটা বুঝতে চাইছেন না। তারা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সংস্কৃতি, সেখানকার পরম্পরা, ভৌগোলিক অবস্থান বিচার করে ঠিক হয়েছে যাতে এই নাগরিকত্ব আইন এর কোনো প্রভাব সেখানে না পড়ে। অথচ কিছু মানুষ নিজেদের রাজনীতির কারণে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে লাগাতর মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এবার যুবকরাই সেই ভুল সংশোধন করে দেবে। এই আইনের ফলেই আজ পৃথিবীর মানুষ জানতে পারছে যে পাকিস্থানে কিভাবে অন্য ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন না হলে দুনিয়ার মানুষ জানতে পারত না যে কিভাবে পাকিস্তানের অন্য ধর্মের মেয়েদের উপর অত্যাচার করা হয়। আজ পাকিস্তানকে জবাব দিতে হবে কেন সংখ্যালঘুদের ওপর সেখানে জুলুম হচ্ছে।
এরপরেই তিনি বলেন, আমি এখানে এসে আরো শক্তি নিয়ে ফিরে। যাচ্ছি স্বামীজি যে ঘরে থাকতেন সেখানে আজ সকালে আমি কিছু সময় কাটিয়েছি। স্বামী যেন আমাকে আরো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। স্বামীজীর আশীর্বাদ নিয়ে এই মাটির আশীর্বাদ নিয়ে স্বপ্নকে সফল করার জন্য আমি এগিয়ে যাব।