আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৪ জুলাই: “খাঁকি পরে দাগ নেব না।” নন্দীগ্রামের বয়ালে যে পুলিশ অফিসার মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে একথা বলেছিলেন, সেই আইপিএস অফিসার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁর দাবি, দশ বছরে পুলিশ অনেক মানবিক হয়েছে। তাহলে এর আগে কি পুলিশ অমানবিক ছিল? তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
‘আপনার থানা, আপনার পাড়ায়’। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুরত্ব ঘোচাতে চলতি বছরের ২০ জুন থেকে এই প্রকল্প শুরু করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। প্রথম এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয় মহম্মদবাজার থানা এলাকায়। বুধবার রামপুরহাটে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য শিশুশ্রমিক কিংবা বাল্যবিবাহ বন্ধ, গণপিটুনির মতো অপরাধ রোধ করা, কোনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অর্ধাহারে থাকলে তার তথ্য তুলে দেওয়া, ড্রাগ সেবন রোধ সহ একাধিক অপরাধ পুলিশের নজরে আনা। এককথায় গ্রামের মানুষকে পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অপরাধ নির্মূল করার পাশে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা। এর জন্য গ্রামের মানুষকে থানায় গিয়ে হয়রানি হতে হবে না। প্রতিটি পঞ্চায়েত অফিসে ঝোলানো থানার দেওয়া অভিযোগ বাক্সে চিরকুট লিখে ফেললেই হবে। প্রয়োজনে অভিযোগকারীর নাম গোপন করা হবে। পাশাপাশি অভিযোগকারী তাঁর অভিযোগের সমাধানের অগ্রগতিও জানতে পারবেন। এমনই অভিনব প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে বার বার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী।
বুধবার রামপুরহাট থানার বড়শাল হাইস্কুলে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক সরকার, রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সায়ন আহমেদ, রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদিব প্রামানিক।
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আমার প্রশাসনকে মানবিক হতে হবে। ফলে এই সরকার আসার পর অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকেই পুলিশ মানবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রেরণায় আমরা এই প্রকল্প শুরু করতে পেরেছি। দুয়ারে সরকার, দুয়ারে রেশন, দুয়ারে ত্রাণের মতো সরকারের প্রত্যেক বিভাগ এভাবে মানুষের পাশে রয়েছে। তাই আমরাও মানুষের পাশে থাকতে থানার বাইরে বেরিয়ে মানুষের সঙ্গে থাকার প্রচেষ্টা শুরু করেছি।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা আগেও কাজ করছিলাম। এমনটা নয় যে পুলিশ ওই সময় কাজ করছিল না। তবে ২০১১ সাল থেকে পুলিশ আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। এর জন্য মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা নিশ্চয় রয়েছে। বর্তমানে পুলিশ রক্তদান শিবির করছে। সেফ ডাইভ সেভ লাইফ, বাল্যবিবাহ রোধের জন্য ব্যবস্থা করছে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আগে মানুষ পুলিশকে ভয় পেত। এখন মানুষ পুলিশের অনেক কাছাকাছি এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এটা সম্ভাব হয়েছে।”