আমাদের ভারত, ১০ সেপ্টেম্বর: রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক থেকে ২১-এর মহারণের রণহুঙ্কার দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডা। চাঁচাছোলা ভাষায় তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিকে হিন্দু বিরোধি রাজনীতি বলে আখ্যায়িত করলেন তিনি। একই সঙ্গে একগুচ্ছ ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন অমিত শাহের এই উত্তরসূরী।
একুশের নির্বাচনে তৃণমূল সরকারকে উপড়ে ফেলার ডাক দিয়েছেন নাড্ডা। রাজ্য বিজেপির নবগঠিত কর্মসমিতির বৈঠক বসে সেন্ট্রাল এভিনিউ সংলগ্ন মাহেশ্বরী সদনে। সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে সেখানে খুব কম নেতৃত্ব উপস্থিত হয়েছিলেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, রাষ্ট্রীয় কার্যকরনী সদস্য মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা ছিলেন মাহেশ্বরী সদনে। এছাড়া বেশির ভাগ নেতৃত্বকেই একটি ভার্চুয়াল লিংক পাঠিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়। এমনকি বিজেপি সভাপতি নাড্ডাও দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে সামিল হয়েছিলেন।
তবে সভা ভার্চুয়াল হলেও বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ ছিল মারাত্মক ঝাঁঝালো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কিভাবে পর্যুদস্ত করতে হবে, তার দিশা নির্দেশ দিতে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এদিন সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগে আবারও একবার সোচ্চার হন নাড্ডা। তিনি মনে করিয়ে দেন, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমি পুজোর দিন পশ্চিমবঙ্গের লকডাউন বলবৎ করা হয়েছিল অথচ ৩১ জুলাই বকরি ইদ ছিল বলে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছিল। তিনি সমালোচনার সুরে বলেন, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি, তোষণের রাজনীতি এবং হিন্দু বিরোধী মানসিকতা তৈরি করার রাজনীতি করে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ জয় করার জন্য বিজেপির কর্মীদের সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বাংলার জনতা আমাদের আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য তৎপর। তাই আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ময়দানে নেমে পড়তে হবে । আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল সরকারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। রাজ্যজুড়ে ফোটাতে হবে পদ্ম।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু হিন্দুবিরোধী বলেই ক্ষান্ত হননি নাড্ডা। দুর্নীতি ইস্যুতেও তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে। তিনি বলেন, আমফানের পর তৃণমূল রেশনের চাল চুরি করতেব্যস্ত ছিল আর বিজেপির কর্মীরা ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। এদিন তিনি একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের কথাও বলেছেন। লকডাউন মোকাবিলায় কেন্দ্র সরকার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরেছেন তিনি। আয়ুষমান ভারত থেকে প্রধানমন্ত্রী কিষান প্রকল্পের সুবিধা থেকে রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। দাবি করেছেন একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে রাজ্যের প্রকল্প হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে কেন্দ্র সরকারকে অসহযোগিতা করে পশ্চিমবঙ্গকে দেশের মূল ধারা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচ্ছিন্ন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিশ্বভারতী নিয়েও এদিন তিনি মুখ খুলেছেন। বিজেপি সভাপতি বলেন,” কি চলছে বিশ্বভারতীতে??” তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী এবং জমি মাফিয়ারা বিশ্বভারতীর উপর আঘাত হানছে বলে দাবি করেছেন তিনি। নাড্ডা বলেছেন বিশ্বভারতীতে যা ঘটছে তা দেখলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মা চমকে উঠবে।