স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ১৮ অক্টোবর:
একসময় ওঁদেরও ছিল ভরা সংসার, ছিল ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ, জামাই, নাতি নাতনি। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ওঁরা শুনতে পেতেন ছেলেমেয়েদের বাবা মা ডাক, নাতি নাতনীদের দাদু দিদা বলে ডেকে ওঠা। এখন ওঁদের কেউ এভাবে আর ডাকে না। কারণ ও রা যে আর কাজ করতে পারে না। সংসারে যে ওদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। যতদিন টাকা ছিল ততদিন পাশে ছেলেমেয়েরা ছিল, আজ টাকা নেই ছেলেমেয়েরাও নেই। তাই ওঁরা আজ ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন। কারন ওদের তো বয়স হয়েছে। তাই ওদের জায়গা এখন বৃদ্ধাশ্রম।
তবে ওঁরা একটা সময় নিজেদের সংসারের মায়ার বন্ধনে আটকে ছিলেন। এখন বিশ্ব সংসারে মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে। কোনও জাত পাতের বালাই নেই। ওঁরা জানে আমরা সবাই মানুষ। ওঁরা ৩৭ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আনন্দ, দুঃখ,ব্যাথা বেদনা সবাই এক সঙ্গে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
কৃষ্ণনগরের অ্যাডোরেশন সিস্টার্স অফ দ্যা ইমাকুলেট অফ মেরি বৃদ্ধাশ্রম এখন তাদের ঠিকানা। নিজের পরিবার বলতে এখন তারা এটাই বোঝেন।
সামনে দুর্গা পুজো। আর এই দুর্গাপুজোয় সবাই নতুন জামা কাপড় পড়বে। কিন্তু ওরা পরবে না? তাইবা কি করে হয়? তাই পুজোর আগেই কর্পোরেট কর্মরত নবকুমার গড়াই ও তাঁর পরিবার এখানে ছুটে আসেন তাদের বৃদ্ধ বাবা মাদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটাতে। এর আগে নববাবু বহুবার এখানে এসেছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মাদের খোঁজ নিতে। এমনকি করোনা আবহেও তিনি এই বৃদ্ধ বাবা মাদের হাতে তুলে দিলেন যৎসামান্য জামাকাপড় ও মিষ্টি। তাঁদের ছেলে হিসাবে এবারও তিনি তার কর্তব্য পালনে ভোলেননি। পুজোতে ওতিনি তার বাবা ও মাদের জন্য নিয়ে এলেন শাড়ি ও মিষ্টি।
নববাবু বলেন, আমার খুব ভালো লাগে, আমার এই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। আমার সাথে ওঁনাদের একটা আত্মার সম্পর্ক হয়ে গেছে। আমার নিজের পরিবারের মতোই এরাও আমার পরিবার। আমি ধন্য এঁনাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে। এই বাবা মাদের একটু হাসি আমার কাছে বড় পাওনা। আজ এই মহৎ কাজে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন নবদ্বীপের বলদেব জি মন্দিরের প্রভুপাদ কিশোর কৃষ্ণ গোস্বামী।