নদিয়ায় তৃণমূলের সভায় একই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুকুল রায়, জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে

আমাদের ভারত, নদিয়া, ৯ নভেম্বর: নদিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে দেখা গেল মুকুল রায়কে। মুকুল রায়ের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বেশকিছু দিন ধরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করার জল্পনা শোনা যাচ্ছিল মুকুল রায়ের। কিন্তু তৃণমূলের দলীয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত হতে দেখা যায়নি তাঁকে। এদিকে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। আর তার আগেই মমতা ব্যনার্জি তার সভা শুরু করলেন নদীয়া থেকে। এই সময়ই মুকুল রায়কে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর সভা মঞ্চে। এই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সার্কিট হাউসে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন দলের নেতাদের সাথে। সেখানে মুকুল রায় উপস্থিত ছিলেন। আর বুধবার কৃষ্ণনগর কলেজ মাঠের সভা মঞ্চে দেখা যায় মুকুল রায়কে। এতেই পরিষ্কার হয়ে গেল পঞ্চায়েত ভোটের আগেই মুকুল বাবু তার পুরনো ফর্মে ও পুরোনো জায়গায় ফিরতে চলেছেন।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরের সভা মঞ্চ থেকে বিজেপিকে একহাত নেন। তিনি বলেন, নদিয়া জেলার জন্য বিজেপি কিছুই করেনি। শুধুমাত্র জেলায় অশান্তি বাধিয়েছে। তিনি বলেন, ভোট এলেই বিজেপি এনআরসি প্রসঙ্গ তোলে। তিনি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, বাংলায় এনআরসি করতে দেওয়া হবে না। তিনি সভা মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়ে দেন কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব কাড়া যাবে না। বিজেপিকে দানবিক সরকার বলে কটাক্ষ করেন তিনি।

এরপর সভা মঞ্চ থেকে তিনি রাণাঘাটের বিজেপি বিধায়ককে প্রশ্ন করেন জেলার উন্নয়নে কি এমন করা হয়েছে জেলার মানুষকে জবাব দিতে হবে। তিনি এও বলেন, ভোট আসলেই বিজেপি মানুষকে ভয় দেখায়। নানা এজেন্সিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তিনি বিজেপিকে লক্ষ করে হুঁশিয়ার দেন ভয় দেখিয়ে বাংলার মানুষকে রোখা যাবে না। তিনি বলেন, ২০২৪ এ কোনো ভাবেই বিজপি ক্ষমতাই আসতে পারবে না। বাংলার মানুষ আমাদের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তাই বিজেপিকে রুখতে মানুষ জবাব দেবে।

এরপর তিনি সভা মঞ্চ থেকে রাজ্যে যেভাবে ডেঙ্গি বাড়ছে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, কলকাতা বা পার্শ্ববতী এলাকা নয়, গোটা রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির বিপদ বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, আমি এখানে প্রতি বছর আসি। কোভিডের সময় একটা সমস্যা হয়েছিল। ডেঙ্গি একটু আছে। নানা জিন নিয়ে ডেঙ্গি আসে। শীত এলেই আসতে আসতে কমবে। পুরসভা ও পঞ্চায়েত গুলোকে নজরে রাখার কথা বলেন। আবর্জনা কোথাও জমতে দেবেন না। পুজোর জন্য আনেক সামগ্রী পড়ে রয়েছে। সেখানে বাসা বাঁধে। জল যেন কোথাও না জমে। পরিষ্কার রাখতে হবে।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা চলার সময় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় করিমপুর বিধানসভার লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন ধরে জর্জরিত শাসক দল। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফর শুরু করলেন নদিয়া থেকে।
জানাগেছে, আজ মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের অনুগামীরা যাচ্ছিল। তাদের বাস যখন করিমপুর এসে পৌঁছায় সেই সময় করিমপুর বিধানসভার লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে তাদের গাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের অন্য এক গোষ্ঠী। জানাগেছে, বাসে লাগানো তৃণমূলের ফ্লেক্সটি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা মানতে রাজি নন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

এই প্রসঙ্গে করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিং রায় জানিয়েছেন, কোনো ঝামেলার খবর জানেন না তিনি। অন্যদিকে, আবু তাহের খান কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। সভায় প্রত্যেকই ঠিকঠাক এসেছেন বলে তিনি জানান। তিনি এও বলেন, এমন কিছু ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে এই ঘটনা সামান্য ঘটনা এতো বড় একটি দল এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা মুখ্যমন্ত্রী জেলায় থাকা কালীন এ ধরনের ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিষয়টিকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌছালে তিনি কি ব্যবস্থা নেন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *