আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৩০ আগস্ট: কৈলাস বিজয় বর্গীয়র পর এবার তৃণমূল নেতার আশ্রমে মুকুল রায়। যদিও এর মধ্যে রাজনীতি না খোঁজার আবেদন জানিয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূল নেতারা। তবে এদিন বিভিন্ন মাপের কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে আশ্রম চত্বরে দেখা গিয়েছে।
বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণপুর অধুনা নবহিমাইতপুর গ্রামে রয়েছে ঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের আশ্রম। তৃণমূলের নলহাটি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি বিভাস চন্দ্র অধিকারী ওই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার ঠাকুরের মন্দিরের ছবি তুলে নিয়ে এসে গ্রামে একই রকম মন্দির নির্মাণ করেন। প্রতিবছর ঠাকুরের আবির্ভাব তিথিতে সেখানে দুদিন ধরে বড় উৎসব হয়। ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বার্ষিক উৎসবে মন্দিরে এসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয় বর্গীয়। এ নিয়ে দলেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবার সেই আশ্রমেই বিজেপি নেতা মুকুল রায় এসে বিতর্ককে আরও উস্কে দিলেন।

রবিবার দুপুরে সরাসরি কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ সীমান্তের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের নবহিমাইতপুর গ্রামে পৌঁছন মুকুল রায়। প্রথমে তিনি ঠাকুরের আশ্রমে গিয়ে প্রণাম করেন। এরপর একটি ঘরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ফের কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়া আগে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “একটা প্রত্যন্ত গ্রামে সৎ সংঘের এতো বড় একটা পরিকাঠামো ভাবাই যায় না। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে মানুষ শ্রদ্ধা করেন। সেই আশ্রমে আমি এসেছিলাম আমার সমস্ত শ্রদ্ধা ভক্তি জানাতে। এটাকে রাজনীতি ভাবলে হবে না। কারণ এই মন্দিরের যিনি দেখভাল করেন তিনি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিভাস চন্দ্র অধিকারী।” আগে কৈলাস বিজয় বর্গীয়, এবার আপনি তাহলে কি বিভাস চন্দ্র অধিকারী বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন? প্রশ্নে মুকুল রায় বলেন, “উনি এতো বড় একটা আশ্রম চালান। সেই আশ্রমে সব ধর্মের, সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকজন আসবে। তাই বলে বিভাসবাবু বিজেপিতে আসছেন ধরে নেওয়া ঠিক হবে না।”
এদিন মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করতে বেশ কিছু তৃণমূল নেতাকে আশ্রম চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এব্যাপারে মুকুলবাবু বলেন, “আমি আগে তো তৃণমূল করতাম। তাদের সঙ্গে তো সম্পর্ক রয়েছে। তারা কেউ কেউ দেখা করতেই পারে। মনে রাখবেন লোকসভায় আমরা ১৮টা আসনে জিতেছি। সব কিন্তু বিজেপির ভোটে নয়। তৃণমূলের লোকজনও ভোট দিয়েছিল। মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা আলাদা জিনিস। সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তাছাড়া বিভাসের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। সেই সম্পর্কের টানে এসেছিলাম। উনি ওনার নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করবেন, আমি আমার নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করব। সম্পর্ক আলাদা জিনিস”।

বিভাসবাবু বলেন, মুকুলবাবু আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। আমি অসুস্থ হওয়ার পর আমাকে নার্সিং হোমে দেখতে গিয়েছিলেন। এখানে আমার আশ্রম দেখতে এবং আমি কেমন আছি সেটা দেখতে এসেছেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমার আশ্রমে সর্বধর্মের মানুষ, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা আসেন। মুকুলবাবুর আসাটা নতুন নয়। তবে আমি তৃণমূলেই আছি। বিজেপি যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।”
এদিন আশ্রম চত্বরে গেরুয়া পাঞ্জাবী পড়ে ঘুরতে দেখা যায় সিউড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ করম হোসেন খানকে। পদে থাকলেও তিনি কোনও দিন পঞ্চায়েত সমিতিতে যান না। তিনি বলেন, “আমি আশ্রমে এসেছিলাম। তবে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করিনি। আমি অন্য কোনও দলে যোগদান করলে আগে তৃণমূল ছাড়ব। আর পঞ্চায়েত সমিতিতে যাই না কারণ দল চায় না তাই। দল চাইলে ফের পঞ্চায়েত সমিতিতে যাব।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “মন্দির কিংবা আশ্রমে যে কেউ যেতে পারেন। আমিও তো বহু মন্দিরে গিয়েছি যাদের অনেক পুরোহিত বিজেপি করেন। তবে করম হোসেন খান কেন গিয়েছিলেন খোঁজ নিয়ে দেখছি। করম খান নেতা নয় কর্মী।”

