স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, ৯ মার্চ: জন্ম থেকেই দুটো পা অকেজো৷ আর পাঁচজনের মতন স্বাভাবিক নয় তার দুটি হাতও৷ শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অদম্য ইচ্ছেশক্তির ওপর ভর করে জীবনের এগিয়ে যাওয়ার অবিচল লক্ষ্যে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ২ নং ব্লকের তরিয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের গণ্ডাল এলাকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়া মহম্মদ গুলজার। তার এই লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরাও৷
উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর ২ নং ব্লকের তরিয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের গণ্ডাল এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলমের দুই ছেলে৷ তার মধ্যে বড় ছেলে মহম্মদ গুলজার জন্মলগ্ন থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ দুই পা হাঁটাচলার ক্ষেত্রে যেমন অনুপযুক্ত তেমনই দুই হাতও চলে না স্বাভাবিক মতো৷ ফলে শারীরিক এই অক্ষমতার কারণে কোনোভাবে জীবনের হার মেনে নিতে চায়নি গুলজার। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে প্রাথমিক স্কুলের পাঠ চুকিয়ে গণ্ডাল হাই স্কুলে ভর্তিও হয় সে৷ ফলে ছোটো বেলা থেকেই তাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া ও নিয়ে আসার কাজ করতে হয় পরিবারের সদস্যদের৷ এভাবেই আজ জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় বসেছে গুলজার। এবছর গণ্ডাল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তার সিট পড়েছে চাকুলিয়ার হাইস্কুলে৷ বুধবার পরীক্ষার তৃতীয় দিন ভূগোল পরীক্ষার দিনও তার ছোটো ভাই আফরোজ আলম তার দাদাকে টোটো করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে আসে। সে জানায়, তার দাদা ছোটো থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ এই ভাবেই তাকে স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসার কাজ করতে হয়। তবে দাদা যেভাবে সংঘর্ষ করে আসছে তাতে খুশি পরিবারের সদস্যরা। আগামীদিনে যাতে গুলজার সাফল্য লাভ করতে পারে সেই কামনা করেছে চাকুলিয়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষও৷
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব দে বলেন, গণ্ডাল হাইস্কুল থেকে এবছর মহম্মদ গুলজার নামে এক শারিরীক প্রতিবন্ধী ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছে। সে ভাল মতো চলতে ফিরতে পারে না৷ এমনকি ভাল মত কথাও বলতে পারে না৷ এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই জীবন যুদ্ধে হেরে যায়৷ কিন্তু গুলজার দমে যায়নি৷ অদম্য ইচ্ছে শক্তির ওপর ভর করেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পেরেছে৷ আমরা এই লড়াকু মানসিকতার জন্য খুশি৷ নিজের দক্ষতাতেই পরীক্ষা দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো রাইটারের সাহায্য নেওয়ার জন্য আবেদন জানায় লনি। এমনকি অতিরিক্ত সময়ও বরাদ্দ করার আবেদন করেনি।
একদিকে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুলজারকে সব রকমের সাহায্যর আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও কানাইয়া কুমার রায়।