আমাদের ভারত, ২০ ডিসেম্বর: বুধবার লোকসভায় পাশ হয়ে গেল ফৌজদারি সংক্রান্ত তিনটি বিল। ফলে দেড়শো বছরের পুরনো ভারতীয় দণ্ডবিধি, ভারতীয় ফৌজদারি আইন এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে বদল এলো। লোকসভায় এই তিন বিলের উপর বিতর্ক হয়। যদিও গণহারে সাসপেন্ড হবার কারণে বিরোধী আসনে প্রায় কোনো সাংসদই ছিল না বললেই চলে। বিরোধীশূন্য লোকসভাতে এই বিলের বিষয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, এই তিনটি নয়া বিল ভারতকে দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে।
শাহ দাবি করেন, ন্যায় বিচার, সমতা ও নিরপেক্ষতার ধারণার ভিত্তিতে এই তিন নয়া বিধি তৈরি করা হয়েছে। এই তিন বিল আইনে পরিণত হলে সারা দেশে এক ধরনের বিচার ব্যবস্থা চালু হবে, সমতা আসবে বিচার ব্যবস্থায়। তিনি বলেন, লালকেল্লা থেকেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশকে ঔপনিবেশিক আইন থেকে মুক্ত করতে হবে। এরপর ২০১৯ সাল থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। অমিত শাহ বলেন, ব্রিটিশ আমলের আইনগুলি প্রজাদের শাসন করার জন্য তৈরি করেছিল বিদেশী শাসকরা। এই আইনগুলি দেশের মানুষের জন্য করা হয়নি। ব্রিটিশ রাজত্ব কায়েম রাখার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সেই আইনের বদলের প্রয়োজন ছিল। তাঁর দাবি, নতুন তিনটি আইন আমাদের দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে। সংবিধানের চেতনায় এই আইনগুলি তৈরি করা হয়েছে।
এদিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যারা বলে এই তিনটি নয়া বিল আনার প্রয়োজন কী, তারা বোঝে না। তাদের বলবো, খোলা মন রাখলে, ভারতীয় মন থাকলে এর প্রয়োজন বুঝবেন। কিন্তু আপনার যদি মন ইতালির হয়, তাহলে এর প্রয়োজন আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না।”
তিনি আরো বলেন, সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আইনগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে; যাতে ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং সবাই যাতে আইনের চোখে সমান আচরণ পায়। অমিত শাহ জানান, ব্রিটিশ শাসনের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় সমাজে ন্যায় বিচারের ধারণা প্রচলিত ছিল। তাই বহু ভারতীয় দর্শনকে এই তিন বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ন্যায় বিচার থেকে শাস্তির ধারণা এসেছে। শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্যাতিতকে ন্যায়বিচার দেওয়া এবং মানুষ যাতে আর অপরাধ না করে তা নিশ্চিত করা। শাস্তি দানের মাধ্যমে সমাজে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। এই নয়া বিলগুলিতে ভারতীয় ন্যায় বিচারের ধারণা প্রতিফলিত হবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার ফৌজদারী বিচার, আইন মানবিক হয়ে উঠবে।
তিনি জানান, এই প্রথম ভারতীয় আইনে সন্ত্রাসবাদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এক্ষেত্রে আইনের যে সকল ফাঁক ছিল, কেউ আর তার সুযোগ নিতে পারবে না। রাজদ্রোহীতাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতায় পরিণত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তির জায়গায় দেশকে জায়গা দেওয়া হয়েছে, যারা দেশের ক্ষতি করবে তাদের কখনো রেহাই দেওয়া হবে না।
দেশে গত কয়েক বছরের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে নয়া বিলগুলিতে গণপিটুনির ঘটনায় অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। শাহ বলেছেন, গণপিটুনি একটি জঘন্য অপরাধ। এই আইনে আমরা গণপিটুনির অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছি। ৭৫ বছরের মধ্যে ৫৮ বছর দেশ শাসন করেছে কংগ্রেস, তারা ক্ষমতায় থেকেও এই আইন কেন বদলায়নি সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, আগামী ১০০ বছরে গোটা বিশ্বে অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটবে। সেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নয়া বিলে আইনের বিধান রাখা হয়েছে। সাইবার অপরাধের জন্য অনেক বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি জানান, নয়া তিন বিলে পুলিশ ও নাগরিকের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য করা হয়েছে। এরফলে শাস্তি প্রদানের সংখ্যা বাড়বে। ন্যায়বিচার, সমতা এবং নিরপেক্ষতার ধারণাকে বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ফরেন্সিক বিজ্ঞানকে।
দেড়শো বছর পর এই আইন বদলানো হচ্ছে। তিনটি বিল আইনে পরিণত হলে, সেই আইনের ভিত্তিতে বিচার ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। এর আগে ভারতীয় ফৌজদারি বিধিতে ৪৮৪টি ধারা ছিল। এর বদলে যে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা বিল আনা হচ্ছে, তাতে থাকছে ৫৩১টি ধারা। এর ১৭৭টি বিভাগে অদল বদল করা হয়েছে। ৯টি নতুন বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে। ৩৯টি নতুন উপ-বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে। ৪৪টি নতুন বিধান যোগ করা হয়েছে।