আমাদের ভারত, ১৮ জুলাই: জয় শ্রীরাম নয়, বরং এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা বলে দুর্গাপুরে বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মূলত উন্নয়নের অস্ত্রেই ২১ জুলাই- এর আগে তৃণমূলকে বিঁধতে এসেছিলেন মোদী। ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস যেমন তিনি করেছেন, তেমনি তৃণমূলের দুর্নীতি, রাজ্যের একাধিক হিংসার ঘটনা যেমন আর জি কর, কসবা কান্ড, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসা কিছু বাদ যায়নি মোদীর বক্তব্য থেকে। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এটি দ্বিতীয় বঙ্গ সফর। রাজনৈতিক মহলের মতে ২৬-এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোতে শুরু করে দিয়েছে মোদীর দল।
মোদী বলেন, “বিজেপি বিকশিত বাংলা চায়। বাংলার মাটি প্রেরণায় ভরা। বিজেপি সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চায়। একসময় বাংলা সমৃদ্ধ ছিল। উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কিন্তু আজ আর তা নেই। আমরা এই অবস্থা বদলাতে চাই। এখন কাজের জন্য বাংলার মানুষকে বাইরে যেতে হয় বাংলাকে এই অবস্থা থেকে বার করে আনতে হবে।” বাংলা ভাষাতে মোদী বলেন, “বাংলা পরিবর্তন চায়, বাংলা উন্নয়ন চায়”
মোদী বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেই বাংলা দেশের অন্যতম শিল্প সমৃদ্ধ রাজ্য হয়ে উঠবে, এটাই তাঁর বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল বাংলাকে শিল্পোন্নত হতে দিচ্ছে না, তাই তৃণমূলকে বাংলা থেকে সরাতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গকে এমন ভাবে গড়তে হবে যাতে এখানে নতুন বিনিয়োগ আসে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু যতদিন তৃণমূল থাকবে ততদিন এসব হবে না।
মোদীর মুখে আজ মুর্শিদাবাদের অশান্তির প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটলেও পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তৃণমূলের গুন্ডাগিরির জন্য এখানে বিনিয়োগকারীরা আসে না। সিন্ডিকেটরাজ দেখে পালিয়ে যান বিনিয়োগকারীরা।
আজ মোদীর ভাষণে আর জি কর এবং কসবা কান্ড উঠে আসে। তিনি বলেন, বাংলার হাসপাতালও মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত নয়। তখনো দেখা গেছে কিভাবে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। তারপরেও আরও একটি কলেজে একটি মেয়ের ওপর অত্যাচার হল, সেখানেও দেখা গেল তৃণমূলে লোকেরাই জড়িত।
মোদী বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের হয়ে সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল। হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কান খুলে শুনে এখন অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে তৃণমূল, বলে দাবি করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ডবল অ্যাটাক হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এই যে হাজারের উপর শিক্ষকদের চাকরি নেই এটা তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য। এর ফলে যেমন হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনই লাখ লাখ পড়ুয়া যারা স্কুলে পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে গেছে স্কুলে শিক্ষক না থাকায়।
তিনি মনে করিয়ে দেন, আজ ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জন্মদিন। সেই কথা স্মরণ করিয়ে মোদী বলেন, যে মাটিতে কাদম্বিনী গাঙ্গুলি জন্মগ্রহণ করেছে সেখানে মহিলা ডাক্তারকেই আজ হাসপাতালে নিযার্তনের শিকার হতে হয়।
বাংলা ভাষার অস্মিতার কথা তুলে মোদী বলেন, তৃণমূল আর বামেরা বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিজেপি বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। তাঁর দাবি দেশের যেখানেই বিজেপি, সেখানে বাংলাকে সম্মান দিয়েছে বিজেপি। বাংলার অস্মিতা বিজেপির কাছে সুরক্ষিত।
ত্রিপুরা অসমের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিজেপি যেখানে ক্ষমতায় এসেছে সেখানেই উন্নয়ন হয়েছে। তাই একবার বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসুন। বাংলায় একটা সরকার হোক ইমানদার দমদার। বিকশিত বাংলা মোদীর গ্যারান্টি।
তাঁর দাবি, তৃণমূল সরলে তবেই পরিবর্তন আসবে। বাংলায় নতুন কলকারখানা হবে, সিএনজি গাড়ি চলবে। তরুণ প্রজন্ম কাজ পাবে। পশ্চিমবঙ্গ টপ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্য হবে। কারণ এখানে প্রতিভা রয়েছে, নদী রয়েছে, সমুদ্র রয়েছে। দীর্ঘ বহু বছর ধরে এটি আমদানি- রপ্তানি কেন্দ্র। কিন্তু তৃণমূল সরকার বাংলার উন্নয়নের সামনে দেওয়ালের মতো বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, শ্রাবণ মাস পুণ্যের মাস, এই মাসে বাংলার উন্নতির জন্য কাজের সুযোগ পাচ্ছি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সমৃদ্ধ বাংলা গড়ে তুলবে।