আমাদের ভারত, ১৮ জুলাই: ২৬- এর ভোটের লক্ষ্যে বাঙালি অস্থিরতায় শান। এক্কেবারে খাঁটি বাঙালি হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মুখে আজ জয় শ্রী রাম নয়, জয় মা কালী, দুর্গা ছিল। শমীকের সভাপতিত্ব গ্রহণের দিন থেকেই পদ্ম শিবিরের যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল তা মোদীর সভায় একেবারে পরীপূর্ণতা পেল বলা যায়। অত্যন্ত নিপুণ ভাবে আজ বাঙালিয়ানাকে ধরে রাখতে চেয়েছে পদ্ম শিবির দুর্গাপুরে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দাবি করেছেন, বাঙালি অস্মিতা সুরক্ষিত বিজেপির হাতে। তাই তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সম্পূর্ণ বাংলায় বললেন, বড়দের প্রণাম ছোটদের ভালোবাসা।
বাঙালি ভাবাবেগকে নিয়ে বিজেপি এবার বিশেষ যত্নশীল ছিল। তা এবার আয়োজনে দেখা গেছে। দুর্গাপুরের সভায় রজনীগন্ধা ফুলের মালায় বরণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। উপহারে দেওয়া হয়েছে মা দুর্গার মূর্তি, গণেশর মূর্তি।
তাছাড়াও বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রীকে এবার অনেকটাই কৌশলী দেখা গিয়েছে। দিদি… ও দিদি বলে পরিচিত মধুর ভঙ্গিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে বক্তব্য রাখেননি প্রধানমন্ত্রী। আসলে এভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাসঙ্গিক করে দেওয়া থেকে সতর্ক ভাবেই বিরত থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। বরং বাংলায় তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে অসন্তোষ রয়েছে সেই ইস্যুগুলোকে নিয়েই ক্ষুরধার বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেছেন মোদী।
মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাঙলার কবি বিষ্ণু দে, দেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলির আজ জন্মদিন, যারা বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, তাদের কাজের সেই কথা।
একই সঙ্গে মনে করিয়েছেন, বিজেপি এমন একটা পার্টি যার বীজ বপন হয়েছিল এই বাংলায়। বিজেপির পদ্ম বাংলার মহান নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নিজের রক্ত দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এক দেশ এক সংবিধানের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটাই বিজেপির সংকল্প হয়ে গিয়েছিল। সেটা তারা পূরণ করেছেন। তাঁর দাবি, বিজেপি বাংলা ভাষাকে প্রেরণা, পরম্পরা ও পরিচয়ের মাধ্যম বলে মনে করে। বিজেপির কাছে বাংলা ভাষার অহংকার সবার উপরে। মোদীর দাবি, বিজেপি বাংলা ভাষাকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে তুলে ধরে। দেশের যেখানেই বিজেপি আছে সেখানেই বাংলার সম্মান রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে সম্মান করা হয়। এরপরই অভিযোগ করে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এটা কী হচ্ছে? তৃণমূল কংগ্রেস নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়কেউ বাজি ধরছে।
রাজ্যের দুর্নীতি, অনুন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, হিংসা, ধর্ষণ ,সিন্ডিকেট রাজ, কর্মসংস্থানহীনতা সহ একাধিক প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী আজ দুর্গাপুরে সভা থেকে। আর পাল্টা দাবি করেছেন, বাংলার সমৃদ্ধি, বাংলার গৌরব, বাংলার উন্নয়ন, সর্বোপরি বাংলা অস্মিতা সুরক্ষার জন্য বিজেপিকে রাজ্যে ক্ষমতায় আনা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলা সাংস্কৃতির এতো ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল সরকারের শাসনে দুর্নীতিকে দিশা দেখাচ্ছে। বাংলা এমন ছিল না, বাংলার যুব সমাজ শান্তি, কাজ, সুশাসন চায়। একসময় বাংলা দেশের বাণিজ্যের দিশা দেখাতো, অথচ আজ এখানকার ছেলেমেয়েরা ছোট ছোট চাকরির জন্য বাইরে চলে যাচ্ছে। তৃণমূল সরকার যতদিন থাকবে ততদিন শিল্প আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না। দুর্গাপুর স্টিল প্যান্ট সহ একাধিক শিল্পের ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে। আর তার জন্য দরকার, “বাংলায় তৃণমূল হটাও, বাংলা বাঁচাও।”
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে মোদী বলেন, তৃণমূল নিজের স্বার্থে বাংলার পরিচয়কে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। অনুপ্রবেশে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের ভুয়ো পরিচয় পত্র বানিয়ে দিচ্ছে। পুরো ইকো সিস্টেম নষ্ট করে দিয়েছে। এটা কেবল বাংলা নয়, গোটা দেশের জন্য বিপদজনক।
বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এটা নবজাগরণের মুহূর্ত। সবাই মিলে নতুন সকাল আনতে হবে। পরিবর্তনের নতুন পদ্ম ফোটাতে হবে, তবে এই বাংলার সমৃদ্ধি সম্ভব।