অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৪ জুন: এবার মাধ্যমিকে ৩৫% পেলে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হওয়ার আবেদন করতে পারবেন। শনিবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। এতে শিক্ষাবিদ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞান শাখার বিষয় নিয়ে মাপকাঠি কমিয়ে এনেছে শিক্ষা সংসদ। সেই অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমির স্তরে গণিত, জীববিদ্যা, রাশিবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স-সহ বিজ্ঞান শাখার যে কোনও বিষয় নিয়ে পড়তে গেলে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ নম্বর থাকলেই হল। ভারতের অন্যতম খ্যাতিমান প্রযুক্তি-শিক্ষাবিদ তথা ‘বেসু‘-র প্রাক্তন উপাচার্য ও ‘ওয়েবেল’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডঃ নিখিল রঞ্জন ব্যানার্জি এই প্রতিবেদককে বলেন, “সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী যদি অঙ্ক ও বিজ্ঞানে ভাল নম্বর পেয়ে থাকে, আমার মনে হয় না এতে কোনও সমস্যা হবে। যতটা সম্ভব পড়ুয়াদের ইচ্ছেকে মান্যতা দেওয়া উচিত।”
প্রাক্তন উপাচার্য তথা শিক্ষাবিদ, রসারনের ডক্টরেট বাসব চৌধুরী প্রতিক্রিয়ায় এই প্রতিবেদককে বলেন, “এর মানে, কলা বিভাগে লেখাপড়া করে কিছু হবে না, এটা স্বীকার করা হল। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বাজারে চলবে না।”
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি
টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ওয়েবকুটা)-এর সাধারণ সম্পাদক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীন অধ্যাপক কেশব ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে বলেন, “বিদ্যালয়ে যে মানের বিজ্ঞান পড়ানো হয়, একাদশ-দ্বাদশ বা কলেজে বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমের গভীরতা তার চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তাই মাধ্যমিক স্তরে উত্তীর্ণ কেউ যদি বিজ্ঞানে যথেষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী না হন, ভবিষ্যতে তাঁর আত্মীকরণে সমস্যা হতে পারে। এমনকি তাঁর ক্যরিয়ার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আমার তো মনে হয়, বিজ্ঞানের জন্য ন্যূনতম ৫০ শতাংশ চাইলে ভাল হয়।”
ওয়েবকুটা’র সভাপতি প্রায় ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অধ্যাপক শুভোদয় দাশগুপ্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমার প্রাথমিক অনুমান, করোনা ও অতিমারিতে বেশ কিছুকাল পড়াশোনায় খুব বিঘ্ন ঘটেছে। অনলাইনেও মার খেয়েছে পঠনপাঠন। অর্থাৎ, পরিস্থিতি এমনিতেই বিজ্ঞান পঠনপাঠন, বিশেষত ফলিত দিকের মানের সঙ্গে অনেকটা সমঝোতা করতে বাধ্য করিয়েছে। এর পর যদি আমরা ন্যূনতম নম্বরের নিরিখে আরও সমঝোতা করি, তাহলে আশঙ্কা বাড়বে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি তথা বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপক ডঃ পার্থিব বসু এই প্রতিবেদককে বলেন, “দেখতে হবে ঘোষিত সিদ্ধান্তটা স্থায়ী, না সাময়িক। আসলে অতিমারির জন্য তো একটা অস্থিরতা গেল। কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানে ভর্তির জন্য এই ন্যূনতম আবশ্যিক নম্বর কমানোয় সুবিধা হতে পারে। মাধ্যমিকে ৩৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার যে বিজ্ঞানমনস্কতা থাকবে না, এরকম ধরে নেওয়া ঠিক নয়। তবে নম্বর যাই ধরা হোক, ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য একটু উঁচু নম্বর চাইবে। অন্তত মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলোয় একটু ভালো নম্বর থাকলে তবে পরে বিজ্ঞানে ভর্তি হওয়া ভাল।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীন অধ্যাপক তথা সারা বাংলা শিক্ষা বাঁচাও কমিটির সম্পাদক ডঃ তরুণ নস্কর বলেন, “এমনিতেই এবার অনেক বেশি নম্বর পেয়েছে পরীক্ষার্থীরা। ফলে ৪৫% থেকে ৩৫% এ কমানোর কারণ পরিষ্কার নয়। দ্বিতীয়ত, এতদসত্ত্বেও মান কমালে বিজ্ঞান পড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। তৃতীয়ত, এর ফলে বিজ্ঞান পড়তে যত সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী চাইবে তত সংখ্যক আসন স্কুলগুলোর বিজ্ঞান শাখায় সম্ভবত নেই। সামগ্রিকভাবে এর ফলে মানের অবনমন হবে।”