আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ৩০ জানুয়ারি: ১৬ বছর আগে গুজরাটে কাজে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেল পরিবার। পুলিশি সহায়তায় বাড়ি ফিরল কার্তিক দেওয়ান (৩৬)। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হিলি থানার পশ্চিম আপ্তৈর এলাকার বাসিন্দা শম্ভু দেওয়ানের ছেলে কার্তিক। ২০ বছর বয়সে গুজরাটে শ্রমিকের কাজে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু দীর্ঘ বছর পর কার্তিক বাড়ি না ফেরায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভেবে নিয়েছিল তাদের ছেলে আর বেঁচে নেই। হঠাৎ হিলি থানার পুলিশ ওই পরিবারে খবর দেন তাঁদের ছেলে বেঁচে রয়েছে। ছত্রিশগড়ের সুকমা থানার পুলিশ কার্তিককে উদ্ধার করে তাঁদের হেফাজতে রেখেছেন। যার পরেই দুই থানার পুলিশের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কার্তিককে চিনতে পারেন তাঁর মা সুমিত্রা দেওয়ান এবং প্রতিবেশি কমল শিকারি। দুজনে মিলে ছত্রিশগড় পৌঁছে কার্তিককে নিয়ে হিলির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। দীর্ঘ বছর পর ছেলে ঘরে ফেরাতে খুশিতে কার্যত উৎসবের চেহারা নিয়েছে হিলির পশ্চিম আপ্তৈর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোটার তালিকায় নাম ওঠার পরেই স্থানীয় কিছু যুবকের সাথে গুজরাটে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল কার্তিক। প্রথমে ফোনে পরিবারের লোকেদের সাথে কথা হত তাঁর। তবে দীর্ঘ কয়েক বছরে সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি তার বাবা মায়ের। কার্তিকের বাবা, মা, দাদা ও বৌদি দীর্ঘদিন তাঁর কোন খবর না পেয়ে ধরেই নিয়েছিল কার্তিক আর বেঁচে নেই। এমন পরিস্থিতিতেই হিলি থানার পুলিশ তাঁদের বাড়িতে হাজির হয়ে কার্তিকের সন্ধান দেয়। আর এমন খবরে অকাল উৎসবের চেহারা নেয় ওই পরিবারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ছত্রিশগড়ের সুকমা থানার পুলিশ রাতে টহলদারি করার সময় রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখেন কার্তিককে। থানায় খাবার খাইয়ে নতুন পোশাকও দেন পুলিশ কর্মীরা। তবে মানসিকভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রথমে কার্তিক নিজের নাম পরিচয় পুলিশকে জানাতে পারেনি। যার পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে খানিকটা সুস্থ করে তোলেন সুকমা থানার পুলিশ। কিছুদিন বাদে কার্তিকের সাথে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলিতে। তবে কার্তিক নিজের পুরো নাম বলতে না পারলেও পদবী দেওয়ান বলে জানিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই সুকমা পুলিশ হিলি থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর একটি ছবি পাঠায়। যার পরেই দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছে তাঁর পরিবারের লোকেরা। পুলিশের এমন মানবিকতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কার্ত্তিক ও তার পরিবার।
কার্তিকের মা সুচিত্রা দেওয়ান ও প্রতিবেশী কমল শিকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ধরেই নিয়েছিলনে তাঁদের ছেলে আর বেঁচে নেই। কোনদিন ভাবতেই পারিনি যে ছেলেকে ফিরে পাবো। কিন্তু পুলিশের মানবিকতায় এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। ছত্তিসগড় ও হিলি পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
হিলি থানার ওসি তাসি থিরিং শেরপা জানিয়েছেন, ছত্রিশগড়ের সুকমা থানার পুলিশ তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে কার্তিকের খবর দিয়েছিল। যার পরেই হিলিতে খুঁজে বের করা হয় তাঁর পরিবারকে।