আলিপুরদুয়ারে টোল প্লাজায় বন্দুক উঁচিয়ে তান্ডব ও ভাঙ্গচুর দুষ্কৃতিদের, নাম জড়াল জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান দশরথ তিরকির অনুগামীদের!

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১৪ আগস্ট: গভীর রাতে বন্দুক উঁচিয়ে টোল প্লাজার কর্মীদের হুমকি, কর্মরত কর্মীরা কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে। আবার পরদিন সকালে টোলপ্লাজায় ডাকাতি ও তান্ডব চালানোর অভিযোগে ৯ জন দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের তরফে কুমারগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। গোটা ঘটনায় অভিযুক্তরা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাপ্তন সাংসদ দশরথ তিরকির অনুগামি বলে পরিচিত, এমনই অভিযোগকে কেন্দ্র করে জোর উত্তেজনা রাজনৈতিক মহলে। তবে এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ জেলা তৃণমূল কর্তৃপক্ষ। যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি জেলা বিজেপি সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। তিনি বলেন, তৃণমূল দলটাই এমন, দাদাগিরির রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই অবাক হবার কিছু নেই।

আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের বারবিশার গুয়াবাড়িতে এনএইচ-৩১সি ফোরলেনের ওপর অবস্থিত এই টোল প্লাজা। টোলের কর্মীদের অভিযোগ, বুধবার রাত পৌনে বারটা নাগাদ একটি স্করপিও গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে টোল গেট পার হয়ে গেলে আমাদের কর্মীরা গাড়িটি দাঁড়াতে বলে। গাড়িটা কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এসেই কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে আমাদের এক কর্মীকে মারধর করে। তারপরই বন্দুক বার করে আমাদের কর্মীদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিলে তারা কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।তারপর তারা চলে যায় অভিযুক্তরা। এরপর সকালে তারাই আবার ৪০-৫০জন মিলে দলবদ্ধ হয়ে টোলপ্লাজায় এসে তান্ডব চালায়। সেখানে থাকা কম্পিউটার, সিসি টিভি ও টোল বুথ ভাঙ্গচুর করে তান্ডব চালায় বলে অভিযোগ টোল কর্তৃপক্ষের। শুধু তান্ডবই নয়, টোলপ্লাজায় সংগৃহীত কয়েক লক্ষ টাকা এবং কয়েকটি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক সহ গোটা কম্পিউটার ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনার পরেই কর্মীরা ভয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন টোল প্লাজার সুপারভাইজার রানা অধিকারী।

এদিকে রাতে বন্দুক উঁচিয়ে আসার ঘটনাটি টোলের একটি সিসি টিভিতেও ধরা পড়েছে। ঘটনায় অভিযোগ করা হয়েছে কুমারগ্রাম থানায়। লিখিত অভিযোগে একটি গাড়ির নম্বরও উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গোটা ঘটনার সাথে প্রাক্তন সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান দশরথ তিরকির অনুগামীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন টোলে কর্মরত কর্মীরা। এও জানাগেছে, টোল কর্তৃপক্ষের তরফে যে গাড়ির নম্বরটি থানায় জানানো হয়েছে সেই গাড়িটির মালিকের নাম চন্দ্রকলা তিরকি নামে এক মহিলার। আবার দশরথবাবুর স্ত্রীর নামও চন্দ্রকলা তিরকি হওয়াতে আরও জল্পনা ছড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গোটা ঘটনায় তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার নাম জড়ানোয় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতর।

জেলা বিজেপির অভিযোগ, এই ঘটনার সাথে দশরথ তিরকি সহ তৃণমূল জড়িত। যদিও এই ব্যাপারে তৃণমূলের বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব মুখ খুলতে নারাজ। একইভাবে ফোনে দশরথ তিরকির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে জেলা বিজেপি সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা জানান,”তৃণমূল কংগ্রেসের স্বভাব গুন্ডাগিরি করা জাতীয় সম্পত্তি নষ্ট করা। তারা নিজের স্বভাব মতই কাজ করেছে। থানায় অভিযোগ হলেও পুলিশ আর কিছুই করবে না, যেহেতু দশরথ তিরকি তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলার চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সাংসদ। তবে জেলার মানুষ সব দেখছে ও বুঝছে। যথা সময়ে সাধারণ মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের এই গুন্ডাগিরির উত্তর ঠিক দেবে। মানুষ সব বুঝতে পারছে কিন্তু এখন কিছু বলতে পারছে না।” তবে টোলের ভাঙ্গচুরের ঘটনার সাথে যেভাবে শাসকদলের এক নেতার অনুগামীদের নাম সামনে এসেছে তাতে কিছুটা হলেও যে অস্বস্তিতে পড়েছে দল তা বলাই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *