আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ১৩ সেপ্টেম্বর: ক্ষমতাসীন দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে ফের সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি সমূহ বাস্তবায়নের দাবি তুলল বিভিন্ন সংগঠন। ইসকনের সাথে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় হল বুধবার। চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ৪৮ ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি এবং গণঅনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে হবে মহাসমাবেশ। কর্মসূচি সামগ্রিক সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মঠ, মন্দির ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাবাসীর সাথে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর স্বামীবাগে কেন্দ্রীয় ইসকন মন্দিরে। সভায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “সম্প্রতি জন্মাষ্টমীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়েই আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন।
তাদের এ আশঙ্কা অমূলক নয়। আমরাও লক্ষ্য করেছি, অতীতের সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদেরকে রাজনীতির ঘুঁটি বানানো হয়েছে। নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যায়। এ অবস্থার প্রতিকার বিদ্যমান সাধারণ আইনে সম্ভব নয় বলেই আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা বিশেষ আইনের দাবি তুলেছি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগও আমাদের দাবি ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠনসহ সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব কিছু প্রতিশ্রুতি গত নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে দেখলাম, আর একটি নির্বাচন সমাগত হলেও বিগত নির্বাচনী ইশতেহারের সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতির কিছুই এখনো বাস্তবায়ন করেনি। উপরন্তু জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর গৎবাঁধা ঢালাও বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলে আগামী নির্বাচনের আগে এই স্বল্প সময়েও সাত দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্যথায় দেশের সংখ্যালঘু জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপাদ চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন ফুড ফর লাইফের পরিচালক ও ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীপাদ অমানি কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন লিগ্যাল এন্ড ল্যান্ড উইংয়ের পরিচালক শ্রীপাদ চিন্ময় গদাধর দাস, শ্রীমান মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমান সুমোহন মুকুন্দ দাস ব্রহ্মচারী, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, যুব ঐক্য পরিষদের সহ সভাপতি সুবল ঘোষ প্রমুখ।
আসন্ন গণঅনশন ও গণঅবস্থান এবং মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে একই দিনে লালবাগ ঋষিপাড়া দুর্গা মন্দিরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লালবাগ থানা কমিটি, লালবাগ থানা সার্বজনীন পূজা কমিটি, ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম এবং লালবাগ ঋষিপাড়ার বাসিন্দাদের সাথে আর একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্য পরিষদের লালবাগ থানা সভাপতি বিদ্যুৎ কুমার ঘোষ সুজনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শম্ভু নাথ ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ বসু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিলাল রায়, লালবাগের বর্ষীয়ান নেতা বীরেশ কুমার সাহা, লালবাগ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাজকুমার দাস, ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি রামানন্দ দাস প্রমুখ।