সোমনাথ বরাট, ভারত, বাঁকুড়া, ১৮ সেপ্টেম্বর: নিম্নচাপের জের কাটতে না কাটতেই ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি বাঁকুড়ায়। আর এই পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকে দায়ী করলেন রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক। নিম্নচাপের ফলে গত শুক্রবার মাঝ রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়া ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও বাঁকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার ডিভিসির পাঞ্চেৎ, মাইথন ও দুর্গাপুর জলাধার থেকে বিশাল পরিমাণে জল ছাড়ায় বাঁকুড়া জেলার ৬টি ব্লকে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় ১২ হাজারের বেশি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বুধবার দামোদর তীরবর্তী বাঁকুড়ার শালতোড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া, সোনামুখী ইন্দাস ও পাত্রসায়ের ব্লকের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সার্কিট হাউসে জেলা শাসক, পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
পাশাপাশি ছিলেন, মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি, সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, জেলার তৃণমূল বিধায়ক সহ জেলা সভাধিপতি, জেলা পরিষদের সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধানরা। বাঁকুড়া জেলার ছয়টি ব্লক বন্যা কবলিত হওয়ার জন্য ডিভিসিকে দায়ী করে মলয় ঘটক বলেন, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। যার ফলে দক্ষিণ দামোদর সংলগ্ন হুগলি হাওড়া, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার মত জেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল প্রতি বছর রাজ্য সরকার ডিভিসির উপর এই অভিযোগ করে। পাল্টা ডিভিসি জানায়, তারা রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই জল ছাড়ে। এতে কি কোথাও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, সেটা কেন্দ্র বলতে পারবে। তারপরই বলেন, ডিভিসি জানালে তো লিখিত জানাবে। তা তো জানায়নি। এবারেও প্রশাসনকে না জানিয়ে মঙ্গলবার থেকে আড়াই হাজার কিউসেকের বেশি জল ছেড়েছে। এদিনও জল ছাড়ার পরিমাণ কমায়নি।
মলয় ঘটক জানান, জলমগ্ন ৬টি ব্লকের ১২৭০৯টি পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে বিধায়ক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যরা দুর্গত মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন। মঙ্গলবার থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা টিম প্রস্তুত রয়েছে। ডিএম, এসপি সব কিছু নজরদারি করছেন। এছাড়াও জেলায় তিন হাজারের বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। তার মধ্যে ৬২০টি বাড়ি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে এবং ২৪০২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সকলের জন্য ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ হিসেব না পেলেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের একমাত্র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ যে এখানে ফসলের বীমার জন্য চাষিকে কোনো টাকা দিতে হয়না। ফসল বীমার টাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাই চাষিরা ক্ষতিপূরণের টাকা আগেও যেমন পেয়েছেন এবারেও পাবেন।