আমাদের ভারত, বর্ধমান, ৩০ জানুয়ারি: সকাল থেকেই মেজাজটা বিগড়ে গেছে রঞ্জনের। কোথায় ঝলমলে ওয়েদার হবে তা নয়, চারিদিকে কুয়াশা। আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি। নন্দিতার আসার সময় হয়ে এলো।
গত বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির পরে নন্দিতার সঙ্গে প্রথম দেখা রঞ্জনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের তারাবাগ ক্যাম্পাসে ছাত্রী নিবাসে থাকে নন্দিতা। ইচ্ছে থাকলেও সেই ক্যাম্পাসে ঢোকার জো নেই। আজ বলবো, কাল বলবো করে কিছুতেই আর মনের কথা বলে হওয়া ওঠেনি। আজ নন্দিতাকে বলবোই, বলবো! ভাবতে থাকে রঞ্জন। রাতেই নন্দিতাকে কী গিফট দেবে তা প্যাক করেও রাখা আছে। এমনিতেই কাল বৃষ্টি সব ভেস্তে দিয়েছিল। যদিও নন্দিতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কিন্তু আজ তাদের হস্টেলে নন্দিতা আসবে এটা ভাবতেই কেমন যেন আনন্দ হয়। আনন্দের চোটে রাত দুটোয় ঘুমাতে গিয়ে ভোরেই ঘুম ভেঙে যায়। তারপর থেকে তো আকাশের ঝকমারি শুরু হয়েছে।
বন্ধুরাও বলাবলি করে, রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েই সরস্বতী পুজোয় একটা অভিনবত্ব আছে। সারাবছর যেখানে ছাত্রছাত্রীরা একে অপরের হস্টেলে ঢুকতে পারে না। বিশেষ করে তারাবাগ ক্যাম্পাসে ছাত্রী নিবাসে তো নয়ই। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর দুদিন থাকে ছাত্রী নিবাস ক্যাম্পাসে প্রবেশের অবারিত দ্বার।ফলে সকালে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েই পাঞ্জাবী পাজামা পড়ে তারাবাগের নির্জনে কখন যে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে টের পাওয়া যায় না।
সকাল হতে না হতেই ছাত্রীরা ছাত্রদের হস্টেলে তত্ত্ব সাজিয়ে হাজির হয়। তারাবাগের রাস্তা ধরে সার বেঁধে গোলাপবাগের হস্টেলগুলির দিকে তারা যখন পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় চোখ ফেরানো যায় না। দুপুর পর্যন্ত জমিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, মন দেওয়ানেওয়ার পর্ব সেরে তারা হস্টেলে ফিরে গিয়ে ছাত্রদের অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নেয়।
তুঁতে রঙের বেনারসিতে খুব মানাবে নন্দিনীকে। যে করেই হোক আজ নন্দিনীকে বলতেই হবে মনের কথাটা।আকাশি রঙের পাঞ্জাবীটা গায়ে পড়তে পড়তেই ভাবতে থাকে রঞ্জন।তত্ত্বের সাথে হবে মন দেওয়ানেওয়া। সাক্ষী থাকবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।