বিজেপি মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ব্যাঙ্গ, পালটা উত্তর দিলেন মিহির গোস্বামী

অশোক সেনগুপ্ত

আমাদের ভারত, ১৭ জুলাই: বিজেপি মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ব্যাঙ্গের জেরে পালটা দিলেন উত্তরবঙ্গের নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী।

শনিবার টুইট করে মিহিরবাবু লেখেন, “সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পর নবনিযুক্ত কয়েকজন মন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বেশ কিছু মানুষ চিন্তিত ও সন্দিহান, তাঁদের নানা কটাক্ষ আপনাদেরও নজরে এসেছে নিশ্চয়ই। যেমন নতুন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডভীয়জীর ইংরেজি জ্ঞানের স্বল্পতা নিয়ে বিদ্রূপ করতে ছাড়েননি তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ।

অথচ গত সত্তর বছরের এই প্রজাতন্ত্রে ইন্দিরা গান্ধীকে দু-দুবার হারিয়ে দেওয়া পূর্বতন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজনারায়ণ সিং থেকে শুরু করে পূর্বতন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাবু জগজীবন রাম বা পূর্বতন রেলমন্ত্রী তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের মত রাজনৈতিক নেতা, এমনকী আরেক পূর্বতন রেলমন্ত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত প্রমাণ করে দিয়েছেন দেশ বা রাজ্য চালাতে গেলে বিশুদ্ধ ইংরেজি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, ‘দেশীয়’ ইংরেজি দিয়েই দিব্যি চলে যায়।

আসলে সত্তর বছরের প্রজাতন্ত্রের পরেও আমাদের মন থেকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা আজও দূর হয়নি। ইংরেজদের মতো গড়গড়িয়ে ইংরেজি বলতে পারলে যে কোনও জালিয়াতিও যেমন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, তেমনই ফরেন বা ইম্পোর্টেড জিনিস (তা সে চিন-হংকং-থাইল্যান্ড হোক ক্ষতি নেই) না হলে তার গুণমান সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ থেকেই যায়। ঠিক সেই কারণেই ভারতে আবিষ্কৃত ও প্রস্তুত কোভিড ভ্যাক্সিন নিতে আমাদের মধ্যে প্রাথমিক অনীহা লক্ষ্য করা গেছে, যা দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংক না এলে কোনোদিন কাটতই না।

একইরকম দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের উত্তরবঙ্গ থেকে দুই নবনিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা ও নিশীথ প্রামাণিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজনীতিরই মানুষজন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম আমাদের অবহেলিত অনগ্রসর উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন, অথচ এ নিয়ে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উত্তরবঙ্গবাসী হিসেবে কোনও গর্বসূচক মন্তব্য করতে দেখিনি তাঁদের কাউকেই। এ কি তবে আমাদের পরশ্রীকাতরতামূলক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য? নিজে যা হতে পারিনি বা হতে পারবো না, তা প্রতিবেশী কেউ হলে নেতিবাচক মন্তব্য করবো?

রাজনীতির সেইসব বন্ধুরা কি ভুলে যান কামরাজ বা করুণানিধি, জয়ললিতা বা জাফর শরীফ, অনন্ত গীতে বা অশোক গজপতি রাজুর মত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের কথা? যাঁদের ক্ষেত্রে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি! তাই যদি হতো তবে ননম্যাট্রিক মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী বা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কি এই নেতারা কোনওদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন? এতগুলি যে নাম বললাম, এঁরা কেউই তো বিজেপি নন!

আসলে এসবের উত্তর একটাই হয়, রাজনীতিতে শিক্ষিত এলিট শ্রেণির আধিপত্য খর্ব হলেও প্রত্যন্ত পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিতে মানুষের সংকীর্ণ মানসিকতার কোনও পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষা বা ডিগ্রির চাইতেও সরকার চালাতে বেশি প্রয়োজন হয় ব্যবহারিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কখনই নেতৃত্বের মাপকাঠি হতে পারে না।

তাই সবশেষে যে উদাহরণটা না দিলেই নয়, আপনারাও নিশ্চয়ই ভুলে যান নি, মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দুটি সাম্মানিক ডক্টরেট অর্জন করেছেন, তিনি তাঁর প্রথম নির্বাচনে (১৯৮৪) কলকাতার দেওয়াল ভরিয়ে তুলেছিলেন যে ‘ডক্টরেট’ উপাধি দিয়ে (এবং জিতে সাংসদ হয়েছিলেন), সেটি কিন্তু ১৯৮৫ সালেই ‘ভুয়ো’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। তাই বলে পরবর্তীকালে তাঁর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া আটকায়নি।

আজ ৩৫ বছরের তরুণ প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর বিরোধীদের যে ঈর্ষা ও কুৎসা সহ্য করতে হচ্ছে, বলাই বাহুল্য তা পুরোপুরি উপেক্ষণীয়। বরং সমগ্র দেশের সঙ্গে অবহেলিত এই উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াক্ষেত্রে ও যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য তিনি অতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন এই বিশ্বাস উত্তরবঙ্গবাসী হিসেবে আমরা রাখি।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *