সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ১৫ মে: কোভিড ১৯ এ নয়, অভিবাসী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। করোনা আবহে এই পর্যন্ত পুরুলিয়া জেলার মোট ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এই জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েন। কর্মস্থল বন্ধ, উপার্জন না হওয়ায় হাতে সামান্য টাকা শেষ হয়ে যায় তাঁদের। এই অবস্থায় বাড়ি ফেরার জন্য হয়ে উঠেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না থাকায় হেঁটে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেন অভিবাসী শ্রমিকরা। লকডাউনে একমাস আটকে থেকে এগার মাসের ছেলের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল পুরুলিয়ার কেন্দা থানার কোনাপাড়া গ্রামের অক্ষয় মাহাতোর(২৭)। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার হাদল গ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।
লাইন ধরে হেঁটে বাড়ির জন্য রওনা দিয়ে ছিলেন ওই যুবক। শেষ পর্যন্ত রেলে কাটা পড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর।
সম্প্রতি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হলেও সেই সুযোগ অধরা অধিকাংশের। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের উদ্যোগে ট্রাকে করে সহকর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন পুরুলিয়ার কিছু যুবক। উত্তর প্রদেশের আউরিয়ার জাতীয় সড়কে অন্য একটি লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। এর মধ্যে ৪ জন পুরুলিয়া জেলার। এঁদের মধ্যে দুই জনের বাড়ি পুরুলিয়া মফস্বল থানার দুমদুমি গ্রামে। তাঁদের নাম চন্দন রাজোয়ার ও মিলন বাদ্যকর। মৃত অন্য জন অজিত মাহাতো কোটশিলা থানা এলাকার উপরবাটরি এবং জয়পুর ব্লকের ঝালমামড়া গ্রামের গণেশ রাজোয়াড় গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনায় আহতদের মধ্যে এক জন রয়েছেন পুরুলিয়ার শিবু কর্মকার নামে অন্য এক যুবকের। এঁরা সবাই রাজস্থানের একটি মার্বেল পাথরের কারখানার শ্রমিক ছিলেন। লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে একটি শিবিরে গাদাগাদি করে থাকছিলেন তাঁরা। ওই অবস্থায় বাড়ি ফেরার জন্য ছট পট করছিলেন তাঁরা। অথচ, বাড়ি ফেরার অন্য কোনও উপায় তাঁদের কাছে ছিল না।
কোভিড ১৯ এ নয়, অভিবাসী শ্রমিকরা নিজেদের উদ্যোগে বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। বাড়ি ফেরা যেন অভিশপ্ত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন পুরুলিয়ার স্বজন হারারা।