আমাদের ভারত, ৭ ফেব্রুয়ারি : ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নকিপুরে (ছবির ওপরে) জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই এলাকার একজন প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। এই বাড়িতে প্রতিবছর দুর্গা পূজা হতো। যার জন্য বিশেষভাবে একটা পাকা প্যান্ডেল তৈরি করা ছিল। জমিদার হরিচরণ রায় ধনী হওয়ার পেছনে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে আলৌকিক কাহিনি।
তার মা ঘুমের মধ্য স্বপ্নে বস্তা বস্তা টাকা বা গুপ্তধনের সন্ধান পেতেন। আর এই থেকেই হরিচরণ অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন। তখন থেকে সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে নিলামে উঠা চৌহার্দিগুলো তিনি কিনে নিতেন। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি একজন স্বতন্ত্র জমিদার হয়ে উঠেন।
জমিদার বাড়িটিতে দুই তলা বিশিষ্ট। ইংরেজি বর্ণমালা এল (এল) প্যাটার্নের ১৯ মিটার লম্বা একটি ভবন রয়েছে। জোড়া দুটি শিব মন্দির, চিকিৎসালায়, নহবতখানা, পূজা মণ্ডপ, দিঘী ও পুকুর রয়েছে। তবে এসবের অধিকাংশ এখন স্থানীয়দের ভোগদখলে।
ভবনটির বৈশিষ্ট্যগুলি সেই সময়ের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যকে প্রতিনিধিত্ব করে যা ব্রিটিশরা চালু করেছিল। উন্মুক্ত কলাম এবং শোভাময় উপাদানগুলি সেই সময়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কক্ষগুলির চারপাশে খোলা বারান্দা, যা বিনোদন এবং বায়ু চলাচলের জন্য সঞ্চালন এবং স্থান সরবরাহ করে, যা কলোনিয়াল সময়ের স্থাপত্য শৈলীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য।
কলোনিয়াল আমলের জমিদার বাড়িগুলিতে রয়েছে মহিমান্বিত কলাম, আলংকারিক খিলান, খোলা পেডিমেন্ট, ক্রেস্ট এবং অন্যান্য আলংকারিক উপাদান। এই উপাদানগুলি বিল্ডিংয়ের সমন্বিত ফর্ম, যা ব্যাপকভাবে মহিমা এবং বিভিন্ন অলঙ্করণের সাথে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়। শৈলী পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে এটি ভলিউম এবং পরিমাণে কম হয়ে যায়। কাঠামোগত উপাদানগুলি হল প্রাচীর, খিলান, কলাম, ভল্ট, লিন্টেল, রাফটার এবং বন্ধনী।
অপরিচর্যা ও অবহেলার কারণে জমিদার বাড়ির ভবন ও শিব মন্দির সবকিছুই এখন ধ্বংসের মুখে। ইট, সুরকি খসে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি ও লতাপাতা ভবনগুলোকে ঘিরে ধরেছে।
ছবি— অভিষেক কর্মকার।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।