আমাদের ভারত, বাগমারা, রাজশাহী, ২৫ জানুয়ারি: অপু নজরুল বীরকুৎসা জমিদার বাড়ি দেখে অবাক হলাম। এটাই স্থানীয়ভাবে হাজারদুয়ারী নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারী নয়। এটি বাংলাদেশের হাজারদুয়ারী। অন্তত স্থানীয় লোকেরা এ নামেই এই ভগ্নপ্রায় রাজপ্রাসাদটিকে চিনেন।
ইতিহাস বলে তৎকালীন আমরুল ডিহি রাজ্যের রাজা গোপাল ধাম তার মেয়ে প্রভাতী বালাকে ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে দেন এবং তার অধীনস্ত এই বীরকুৎসা পরগণাটি মেয়ে প্রভাতী বালা ও জামাই বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে লিখে দেন। আর এই থেকেই জমিদার বাড়িটির জমিদারীর সূচনা হয়। ১৯৪৭ সালে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারী পরিবার ভারতের হুগলী জেলার চন্দননগরে চলে গেলে পরবর্তীকালে এই বাড়িটি সরকারের দখলে আসে।
জমিদারের হাতী ও লালবর্ণের ঘোড়া ছিল। হাতীতে চড়ে তিনি জমিদারী দেখাশুনা করতেন। জমিদারের ১৭ জন নায়েব খাজনা আদায় ও হিসাব রাখতেন। হাজারদুয়ারী জমিদার বাড়ির দরজাগুলো সেগুন কাঠের তৈরী এবং সুন্দর কারুকাজ করা ছিলো। দরজাগুলো ছিল তিনটি স্তরে সাজানো। প্রথমে কাঠ, তারপর লোহার গ্রিল, এরপরে তা দামি কাঁচে মোড়ানো ছিলো। প্রাসাদের সামনে বাহারি ফুলের বাগান ছিল। প্রাসাদের পশ্চিম দিকে খিড়কি দরজা পার হয়ে সান বাঁধানো একটি বিরাট পুকুর রয়েছে।
এই পুকুরে শুধু জমিদার পরিবারই স্নান করত। প্রাসাদের ভেতরের এক পাশে ছিল জলসা ঘর। কলকাতা থেকে ভোলানাথ অপেরা এসে গান বাজনা করতো। পূর্ব দিকের দেউড়ির দুই পাশে ছয় জন করে বারো জন বরকন্দাজ থাকত। দেউড়ির পাশে ছিল মালখানা। এর কিছু দূরে ছিল মহাফেজখানা।
প্রাসাদের পূর্বের দেউড়ি পার হয়ে সামনে আরেকটি বড় পুকুর আছে, সেখানে স্নান করত আমলা, পেয়াদা ও বরকন্দাজরা। এই পুকুরটি এখন বেদখল হয়ে গেছে। বকুলতলার পাশে খাজনা আদায়ের ঘর ছিল, যা এখন বীরকুৎসা তহসিল অফিস নামে পরিচিত। এর পাশের পূজা মন্ডপটিতে বসানো হয়েছিলো পোস্ট অফিস। আর এখন?
দূর্গম গ্রামে অবস্থিত এই ভবনের কাঠামো এখনো বেশ শক্তিশালী। সংস্কার করা সম্ভব। কিন্তু হাজার দরজার লোহার শিক, গ্লাস অধিকাংশই খুলে নিয়ে গেছে লোকজন৷ এমনকি শ্বেত পাথরের টাইলসগুলোর বেশিরভাগও ফ্লোর থেকে খুলে নিয়ে গেছে। এই না হলে বাংলাদেশ! পাশে একই পরিবারের প্রতিষ্ঠিত হাইস্কুল। সেটাও সুন্দর।
সূত্র— সেভ দি হেরিটেজেস অফ বাংলাদেশ।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।