আমাদের ভারত, ২ ডিসেম্বর: রানীশংকৈল উপজেলার পূর্বপ্রান্তে কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ার জমিদার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি। টংকনাথের বাবার নাম বুদ্ধিনাথ চৌধুরী। তিনি ছিলেন মৈথিলি ব্রাহ্মণ এবং কাতিহারে ঘোষ বা গোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত।
নিঃসন্তান বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশীবাসে যাওয়ার সময় সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান যে তিনি কাশী থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার জন্য বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি পেয়ে যান। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথের দু এক পুরুষ আগেরও হতে পারে।
রাজবাড়ি তৈরির কাজ বুদ্ধিনাথ চৌধুরী শুরু করলেও সমাপ্ত করেন রাজা টঙ্কনাথ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। বর্তমানে রাজবাড়িটির অনেক অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদন্ডে S.N.E.W চিহ্ন আঁকা আছে।
কথিত আছে, ১৯২৫ সালে টংকনাথের আমন্ত্রণে তৎকালীন বড়লাট এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায় রাণীশংকৈলে এলে আমন্ত্রিত অতিথিদের টাকা নোট পুড়িয়ে রীতিমতো রাজকীয় অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করান এবং পর্যাপ্ত স্বর্ণালংকার উপহার দেন। ফলে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি পান।
রাজবাড়ি সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে কাছারিবাড়ি, দুটি পুকুর, ২০০ মিটার দূরে রামচন্দ্র (জয়কালী) মন্দির। জানা যায়, রামচন্দ্র মন্দিরটি রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির চেয়েও অনেক প্রাচীন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মন্দির অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বর্তমানে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি— রাকিব হোসেন।
সূত্র— সেভ দি হেরিটেজেস অফ বাংলাদেশ।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।