আমাদের ভারত, ২১ নভেম্বর: সেখহাটিস্থ সেন বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার অন্তর্গত শেখহাটি ইউনিয়নের সেখহাটি নামক গ্রামে অবস্থিত। নড়াইল সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত শেখহাটি নামক গ্রাম। এ গ্রামে অবস্থিত সেখহাটি-তপনবাগ যুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে এবং ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে কতিপয় প্রাচীন স্থাপনা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরিত্যক্ত এ প্রাচীন স্থাপনা সেন বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত।
সেখহাটিস্থ সেন বাড়ির নিদর্শনের মধ্যে প্রাচীন ১ টি একতলা দালান, ৩ টি পুকুর ও ২ টি ধ্বংসাবশেষের ঢিবি বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। ভৈরব নদীর কোল ঘেঁসে প্রায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একটি ধ্বংসাবশেষের টিবি রয়েছে। এ টিবিটি পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১ মিটার উচুঁ। এ টিবি থেকে ৯ মিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে সেন বাড়ির কালের সাক্ষী হিসেবে দন্ডায়মান এক মাত্র প্রাচীন দালান। আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় তৈরি এ দালানটির দৈর্ঘ্য ১৫ মি. ও প্রস্থ ৮ মি.। দক্ষিণমুখী এ স্থাপনার সামনে একটি বারান্দা ও তিনটি কক্ষ রয়েছে। সামনের বারান্দা ও পূর্ব পাশের কক্ষটি বর্তমানে ধ্বংস হয়ে গেছে। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এ দালানের মাঝের কক্ষটি আকারে বড়। পূর্ব ও পশ্চিম পাশের কক্ষ দুইটি একই পরিমাপের ও আকারে ছোট। সামনের বারান্দা থেকে মাঝের কক্ষে প্রবেশের জন্য তিনটি এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাশের কক্ষে প্রবেশের জন্য একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। ইট ও চুন-সুরকির তৈরি এ দালানের মাঝের কক্ষ থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের কক্ষে প্রবেশের জন্য আরো একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। মাঝের কক্ষের উত্তর দেয়ালে ৪ টি ও পশ্চিম পাশের কক্ষের উত্তর ও পশ্চিম দেয়ালে ২ টি করে কুলঙ্গি রয়েছে।
এ স্থাপানার দক্ষিণ পাশে লাগোয়া ২৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২১ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট ধ্বংসাবশেষের আরো একটি টিবি রয়েছে। এ টিবিটি পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১.২০ মিটার উচুঁ। এ বাড়ির প্রাচীন পুকুরসমূহের একটি বিদ্যমান একতলা দালানটি থেকে প্রায় ৫০ মিটার উত্তরে, আরেকটি প্রায় ৯ মিটার পূর্বে এবং সবচেয়ে বড় পুকুরটি শেখহাটি-তপনবাগযুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এ পুকুরে এখনো সেকালের তৈরি সান বাঁধানো ঘাট দেখা যায়।
উল্লেখ্য যে, নড়াইল সদর উপজেলার ভৈরব নদীর পূর্ব তীরবর্তী ঐতিহাসিক এ শেখহাটি জনপদ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, ‘পাল ও সেন রাজাগণের সময়ে প্রদেশের রাজধানী ছিল এ সেখহাটি। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মণ সেন পালিয়ে এসে কিছুকাল ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে অবস্থান এবং তাঁর সাময়িক রাজধানী স্থাপন করেন, যার সে সময়কার নাম ছিল শঙ্খনাট, বর্তমান শেখহাটিই সেই শঙ্খনাট।’ স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে আরো জানা যায় যে, এটি লক্ষ্মণ সেনের এক গাঁতিদারের বাড়ি। তবে স্থানীয় এ সকল জনশ্রুতির সত্যতা উদঘাটনের জন্য এস্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন।
আলোকচিত্র ও তথ্য সংগ্রহে মহিদুল ইসলাম, শাহিন আলম ও চাইথোয়াই মারমা।
তথ্যসূত্র: প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নড়াইল জেলার জরিপ প্রতিবেদন (অপ্রকাশিত)।
সূত্র— নড়াইলের পুরাকীর্তি।
মোঃ আমিরুজ্জামান, মোঃ মহিদুল ইসলাম, মোঃ শাহীন আলম।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।