আমাদের ভারত, ১৪ নভেম্বর: এটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বারদী গ্রামের চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত। শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম থেকে মাত্র ৯০০ মিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১০ মিনিটের হাঁটা দুরত্বে বাড়িটির অবস্থান। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে প্রায় সকলেই দেখিয়ে দিবে।
জ্যোতি বসু সিপিআই (এম) দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা তেইশ বছর জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী। জ্যোতি বসু পরিবারের আদিনিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী গ্রামে।
জ্যোতি বসুর জন্ম কলকাতায় হলেও, বারদীর চৌধুরী পাড়ায় কেটেছে তার শৈশবের কিছুটা সময়। বাড়িটি মূলত তাঁর নানার(দাদুর) ছিল। জ্যোতি বসুর নানা শরৎ চন্দ্র দাস ও নানী খিরদা সুন্দরীর একমাত্র সন্তান ছিলেন জ্যোতি বসুর মা হেমলতা বসু। বাবা-মার সূত্রে এই বাড়ির মালিক হন হেমলতা বসু। ডাক্তার নিশিকান্ত বসুর সঙ্গে হেমলতা বসুর বিয়ে হয়। বিয়ের সূত্রে স্ত্রীর সুবাদে এই বাড়ির মালিক হন জ্যোতি বসুর বাবা ডাক্তার নিশিকান্ত বসু।
২ একর ৪ শতাংশ জমির এক কোনে ছোটো ও সুন্দর এই দ্বিতল ভবন নির্মাণ করানো হয় ১৯২২ সালে। ভবনের এক পাশে একটি লেখা থেকে জানা যায় জ্যোতি বসুর বাবা মা বাড়িটি ১৩২৯ বাংলা সালের ১৩ অগ্রহায়ণ পাঁচু ওস্তাগারকে দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন। ভবনের নিচ তলায় রয়েছে দুটি শোবার ঘর, একটি বৈঠকখানা ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুটি শোবার ঘর এবং প্রবেশ পথের উপরে একটি বারান্দা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতি বসু ১৯৮৭ সালের ২০ জানুয়ারি এবং ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর তাঁর স্ত্রী-সন্তান-পরিজন সঙ্গে নিয়ে বারদীতে তাঁর পৈতৃক বাড়িটি দেখতে আসেন।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় জ্যোতি বসু তাঁর এই পৈতৃক বাড়ি পাঠাগারে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে ভবনটির পাশেই একটি পাঠাগার ও বিশাল সেমিনার হল তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে ছবিতে সেই পাঠাগারে সংঙ্কলক। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পুরাকীর্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয়।
ছোটবেলায় জ্যোতি বসু তাঁর পৈতৃক বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর দেখাশোনা করতেন আয়াতুন নেছা নামে এক মহিলা। পরবর্তী সময়ে বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্ব পান আয়াতুন নেছা ও তার ছেলে হাবিবুল্লা। বর্তমানে বাড়িটি দেখাশোনা করেন আয়াতুন নেছার নাতি ইউসুফ আলী ও ফকির মাহামুদ। বাড়ির পিছনের দিকের দরজা ব্যবহার করেন তারা।
লেখা— সারোয়ার হোসেন।
ছবি ও সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।