অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১২ নভেম্বর: এই ধারাবাহিকের নানা কিস্তিতে নানাভাবে লিখেছি সাবেক পূর্ববঙ্গে কতটা সমৃদ্ধি ছিল হিন্দুদের একটা বড় অংশের। কিন্তু সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে প্রায় এক বস্ত্রে তাঁদের প্রায় পালিয়ে আসতে হয়েছে এপার বাংলায়। কেন, কীভাবে— অনেকের দুঃখজনক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি। তাঁদের ভূসম্পত্তির খুব সামান্য হাতবদল করা সম্ভব হয়েছিল। একাংশ গিয়েছে সরকারের হাতে। অনেকটা গিয়েছে দখলদারের কবলে। অনেক সম্পত্তির অধিকারের কাজিয়া গড়িয়েছে আদালতে। হিন্দুদের বিপুল পরিমাণ সেই সম্পত্তি অনেক জায়গাতেই হয়ে উঠেছে সরকারের মাথাব্যথার কারণ। কাদের জন্য সাবেক পূর্ববঙ্গে মোট জনসংখ্যায় হিন্দুদের শতাংশ দ্রুত ক্ষীয়মান, তা নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। কিন্তু নিট ফল– এটা হয়েছে। এবং, আরও হবে।
অ্যাডমিন সাজ্জাদুর রহমান ‘সেভ দি হেরিটেজেস অফ বাংলাদেশ’ ফেসবুক গ্রুপে সাবেক পূর্ববঙ্গের অজস্র প্রাচীন ভবনের কথা বা ছবি সামাজিক মাধ্যমে উপহার দিয়েছেন আগ্রহীদের। তিনি লিখেছেন ফরিদপুরের বাইশরশি’র জমিদার বাড়ি, সদরপুরের কথা— “বাইশরশি জমিদার বাড়ি’ বা রাজেন্দ্রবাবুর বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাইশরশি গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের দিকে এই বাইশরশি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। লবণ ব্যবসায়ী উদ্ধর চন্দ্র সাহা বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়ে বাইশরশিতে অনেক জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
১৮২৪ সালে লর্ড ক্লাইভের সময়ে জমিদার উদ্ধব চন্দ্র সাহা বরিশালে কালিয়াতে জমিদারি কেনেন। জমিদারী আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের ভিতরে এই জমিদার বংশধররা বিশাল জমিদারী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। কেননা এই জমিদার বংশের জমিদারীর আওতায় স্থানীয় ফরিদপুর জেলা ছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন অংশ মিলিয়ে মোট ২২টি পরগণা ছিল। তারা তাদের ক্ষুদ্র জমিদারীকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন পরগণা ক্রয় করার মাধ্যমে জমিদারীকে বিশাল করতে থাকে।
জমিদারীর শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত বংশপরম্পরায় জমিদাররা একের পর এক জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ঐ সময়ের জমিদার ভারতে কলকাতায় বসে এখানের জমিদারী পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বংশের একজন ছাড়া বাকি সকলেই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।“
প্রতিক্রিয়ায় নিলুফার জারাফুল্লা লিখেছেন, “খুবই অজত্নে ভুগছে এই জমিদারবাড়ি। আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের আওতায় আনার। আমি জানলাম যে ওটা আগেই ভুমি মন্ত্রনালয়ের সম্পদ করা হয়েছে।“ সাজ্জাদুর রহমান লিখেছেন, “এখন তো আটরশির সাথে মামলা চলছে মালিকানা নিয়ে।“ নিলুফার লিখেছেন, “সেটা তো দখলকৃত করা হয়েছিল এরশাদের আমলে। এখন আবার চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমি বুঝতে পারছি না এ সব প্রত্নতাত্তিক সম্পত্তি কিভাবে সাধারণ লোকের হাতে যায়। সরকার তো এটা সহজেই বেআইনি ঘোষণা করতে পারে।“ আদিত্য সানা লিখেছেন, “যে উত্তরাধিকার দাবি করছে সে আইনি হলেও সরকার দেবে বলে মনে হয় না। এমন নজির অনেক আছে!“