আমাদের ভারত, ২৬ অক্টোবর: বিষয়সম্পত্তি ফেলে সাবেক পূর্ববঙ্গ থেকে অসংখ্য হিন্দু চলে এসেছিলেন এপার বাংলায়। কী অবস্থায় তাঁরা আসতে বাধ্য হয়েছিলেন? কী অবস্থা এখন তাঁদের সেই সব ভিটের? এই ধারাবাহিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
৪০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। ইট, পাথর আর সুরকি দিয়ে গাঁথা ও এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে রুপচন্দ্র রায়ের পুত্র, জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের হাত ধরে ইট পাথর আর সূড়কি গাঁথুনিতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে এই পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। পুরোনো ভবনের চারিদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমন্ডিত জমিদার বাড়ি।
শহর থেকে উত্তর দিকে বেশ খানিকটা দূরেই বাজার ছাড়িয়ে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির অবস্থান।
প্রায় চার শ’ বছর পূর্বে রাজা রায়চন্দ্র রায় নির্মিত এ বাড়িটি বরিশাল বিভাগের মধ্যে অন্যতম পুরনো জমিদার বাড়ি। পুরনো হওয়ার কারণে বাড়ির চারদিকের দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছে।
এ জমিদার বাড়িটি চার শ’ বছরের পুরনো হলেও দ্বিতীয় তলার অংশ এখনও অনেকটা নতুন মনে হয়। দোতলায় উঠে দেখতে পেলাম সেসময়কার বিলাসবহুল একখানা শৌচালয়। যাতে বর্তমানের ছোয়া আছে। দোতলার দেওয়ালের রং ও মেঝেগুলো এখনো পরিপক্ক, মোটামুটি তুলনামূলক চকচকে।
জমিদার বাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনাই আটচালা দেউল রীতিতে তৈরি। বাড়ির সামনেই রয়েছে কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মঠ। আদিপুরুষ রূপচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় ওই জমিদার বংশ। পরবর্তীতে ১৭০০ সালের পর এখানে রূপচন্দ্রের পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের জমিদারি গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই বাড়িটি লাকুটিয়ার জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। জমিদার বাড়ির শেষ ধ্বংসাবশেষ ও স্মৃতিচিহ্ন দেখতে এখনও মানুষ আসে এখানে।
রাজা রাজচন্দ্র রায়ের এ বাড়িটি উনিশ শতকেও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পীঠস্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। কালের গর্ভে আজ তা কেবল স্মৃতি বহন করে চলছে। জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল প্রজাকল্যাণ এবং বিবিধ জনহিতকর কার্যক্রম।
বরিশাল শহর থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জের সড়কটি নির্মাণ হয়েছিল লাকুটিয়ার জমিদারের সময়ে। লাকুটিয়ার জমিদার বাড়িতে আজ জমিদারি নেই, নেই জমিদারদের কোন উত্তরসূরিও।
তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বরিশাল শহরে নির্মিত হয়েছিল ‘রাজচন্দ্র কলেজ। শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ওই কলেজ থেকেই তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পাকিস্তান আমলে ওই এলাকায় ‘পুষ্পরানী বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদাররা।
ওই বংশের শেষ উত্তরাধিকারী দেবেন রায় চৌধুরী বহুকাল পূর্বেই সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দেবেন রায় চৌধুরীর কন্যা মন্দিরা রায় চৌধুরীর বিয়ে হয় বরিশালের কাশিপুরের মুখার্জী বাড়িতে। সেখানেই তিনি এখনও বসবাস করছেন। ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য ইতিহাস সংগৃহীত হয়ে আছে বরিশালের লাখুটিয়া জমিদার বাড়িতে। কালের স্রোতে আজ সেই ঐতিহ্য বিলীনের পথে।
লেখা— অপু রয়ই
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত
সূত্র— ‘সেভ দি হেরিটেজেস অফ বাংলাদেশ’ ফেসবুক গ্রুপ।