পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের স্মৃতি— ৪৭ বরিশালের গৌরনদীর দুর্গামন্দিরের ইতিহাস নতুন প্রজন্ম কি জানে…… ?

প্রিয়া সাহা
আমাদের ভারত, ২৯ ডিসেম্বর: ইতিহাসের সাক্ষী ১৭২ বছরের পুরনো ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ বরিশালের গৌরনদীর দুর্গামন্দিরের ইতিহাস নতুন প্রজন্ম কি জানে…… ?

দেশভাগের পূর্বে শুধু বরিশালের গৌরনদী নয় ভারতীয় উপ-মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ দুর্গা মন্দির হিসেবে এ মন্দিরটিতে ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজা অর্চনা করতে ভীড় করতেন। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমার এ মন্দিরটিতে এখনো পূর্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ৩০ গজ দৈর্ঘ্য, ২০ গজ প্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে নকশা করা ৪৫টি স্তম্ভ।

জমিদার বাড়ির উত্তরসূরীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ১৮৫০ সালে খ্যাতিমান জমিদার মোহন লাল সাহার বাবা জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহার উদ্যোগে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। কারুকার্জ খচিত ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ছাদের ওপরের চারিপার্শ্বের সিংহ মুর্তিগুলো আজও যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। গৌরনদী উপজেলার সদর থেকে প্রায় এক হাজার ফুট দূরত্বে আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রশাখা গৌরনদী-মীরেরহাট নদীর তীরে আশোকাঠী গ্রামে জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়ি। বাড়ির সামনেই রয়েছে সান বাঁধানো সু-বিশাল দিঘি। জমিদার থাকতেন প্রসন্ন ভবনে। বাড়ির প্রবেশদ্বারে প্রাচীনতম সু-বৃহৎ দুর্গা মন্দিরে আজও ভক্তরা পূজা অর্চনা করে আসছেন।

জমিদার মোহনলাল সাহার পুত্র স্বর্গীয় মানিক লাল সাহার স্ত্রী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অরুনা সাহা বলেন, তিনি কিশোরী বয়সে এই বাড়ির বউ হয়ে যেদিন এসেছিলেন সেদিন তার গায়ের ওজনের সমান স্বর্ণালংকারে জড়িয়ে পালকিতে করে নিয়ে আসা হয়েছিল।

এক সময় এই বাড়িতে এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের জন্য জমিদার মোহনলাল সাহা যাত্রা, জারি, সারি ও পালাগানের আয়োজন করতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা মন্দিরটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট চালায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু মূল্যবান সম্পদ।

বরিশালের ইতিহাস ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ গৌরনদীর এই মন্দিরটি আকর্ষণীয় রূপে গড়ে তোলা হোক নয়তো কালের গর্ভে একদিন হয়তো বিলীন হয় যাবে। অযত্ন ও অবহেলায় সে পালকিটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

চিত্র ঋণ মোবিগ্রাফার collected S A I F U L

সঙ্কলন—অশোক সেনগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *