তথ্য – প্রথম আলো।
সূত্র— তপতী বসু‘পুরনো কলকাতার গল্প’ গ্রুপ
আমাদের ভারত, ২০ ডিসেম্বর: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর – দিনুর মা সুশীলা দেবী ছিলেন বরিশালের লাখুটিয়া বংশের জমিদার রাখালচন্দ্র রায়ের কন্যা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। নামের আদি বানান ছিল দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এই নামের বানান পরিবর্তন করে রেখেছিলেন দিন+ইন্দ্র অর্থে দিনেন্দ্র। রবির আবির্ভাবে দিনের প্রকাশ অর্থে এই বানানই স্থায়ী রূপ লাভ করেছে।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর- ২রা পৌষ ১২৮৯ বঙ্গাব্দ কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন দিনেন্দ্রনাথ। ‘‘বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ’’ থেকে জানা যায়, রূপচন্দ্র রায় ছিলেন লাখুটিয়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পৌত্র রাজচন্দ্র রায় জমিদার বাড়িটি ১৭০০ সালে নির্মাণ করেন। তাঁর বসানো হাটকেই সবাই বলে বাবুরহাট। তিনি প্রজাদরদী ছিলেন। লাখুটিয়া থেকে বরিশাল অবধি রাস্তা তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল। বেশ ঘটা করে তিনি রাস উৎসব করতেন। তাঁরই পুত্র রাখালচন্দ্র রায়।দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদামশাই।
লাখুটিয়ার জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের পুত্র রাখাল চন্দ্র রায় ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের পিতার নামে রাজচন্দ্র উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরে ‘রাজচন্দ্র কলেজে’ উন্নীত হয় ! রাজচন্দ্রের অন্য পুত্র পিয়ারীলাল রায় একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং বক্সার পরেশলাল রায় অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তাঁরা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য “রাজচন্দ্র কলেজ” ও “পুষ্পরানী বিদ্যালয়” নির্মাণ করেছিলেন।
লাখুটিয়া জমিদারদের সব থেকে সুন্দর স্থাপনা ছিলো মন্দির। সবচেয়ে উঁচু মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পংকজকুমার রায়চৌধুরী তাঁর স্বর্গত পিতা সুরেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা পুষ্পরাণী রায়চৌধুরীর পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করেছেন।
দিনেন্দ্রনাথের বয়স যখন আট বৎসর তখন মায়ের মৃত্যু হয়। এই সময় তাঁর বোন নলিনীদেবীর বয়স ছিল ছয় বৎসর। দিনু ঠাকুর সম্পর্কে ছিলেন রবীন্দ্রনাথের নাতি।এই নাতির দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ছিলেন গানের সুর করার ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথের এত গান যে আমরা শুনছি, শিল্পীরা শিখছেন – পেছনে আছেন দিনু ঠাকুর। অধিকাংশ রবীন্দ্র সংগীতের স্বরলিপিকার ছিলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন তাঁর “গানের ভান্ডারী”। সুর দিয়ে ভুলে যেতেন নিজে, তাই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দরকার হতো তাঁর স্নেহের দিনুর স্বর আর স্বরলিপির সহায়তা। তা না হলে কত গানই যে চলে যেত বিস্মরণে! দিনেন্দ্রনাথের সব রচনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি ভূমিকাসহ দিনেন্দ্র রচনাবলী বের হয়েছিল, সেখানে রবীন্দ্রনাথই দিনেন্দ্রকে বলেছিলেন – ‘প্রায় রবীন্দ্রনাথ’।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।