রাজ্যপালকে এসইউসিআই (সি)-র ১৯ দফা দাবির স্মারকলিপি

আমাদের ভারত, ২২ মার্চ: মঙ্গলবার এসইউসিআই (সি) দলের পঃবঃ রাজ্য কমিটির ডাকে প্রায় ২৫০০০ মানুষের বিক্ষোভ মিছিল কলকাতার হেদুয়া পার্ক থেকে শুরু করে রানি রাসমণি রোডে আসে। সেখান থেকে দলের এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে রাজ্যপালের দফতরে ১৯ দফার এক স্মারকলিপি জমা দেন। শিলিগুড়ি থেকে ৫০০০ মানুষের মিছিল উত্তরকন্যায় স্মারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপির ১৯ দফা দাবির মধ্যে আছে–
১। রাজ্য সরকারকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে।মজুতদারি-কালোবাজারি কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
২। সব শূন্য পদ এক বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে। সমস্ত কর্মক্ষম যুবকদের চাকরি দিতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরিতে নিয়োগে সমস্ত প্রকার দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৩। ই-পোর্টালের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে মদ সরবরাহ প্রকল্প ‘দুয়ারে মদ’ বন্ধ করতে হবে। মদ-গাঁজা-চরস-ড্রাগস ও অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্য নিয়ে ব্যবসা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মদের প্রসারের ফলে ছাত্র ও যুবকদের নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা বন্ধে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
৪। নারী পাচার, কিশোরী ও শিশুপাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারী নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ বন্ধে সরকার ও প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৫। হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগী ফেরানো চলবে না। স্বাস্থ্য সাথীর মাধ্যমে চিকিৎসার সম্পূর্ণ বীমাকরণ করা চলবে না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সকলের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬। কোনও কারণেই রাজ্যে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ চালু করা চলবে না। স্কুল শিক্ষাকে ‘পিপিপি মডেল’-এর আওতায় এনে বেসরকারিকরণ করা চলবে না। শিক্ষার মানোন্নয়নে পাশ-ফেল প্রথা পূর্ণরূপে চালু করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষার ধর্মীয়করণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ও ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর যে প্রচেষ্টা চলছে, এরাজ্যে তা চালু করা চলবে না। শিক্ষায় ফি-বৃদ্ধি করা চলবে না।
৭। করোনাকাল ও তার পূর্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্ত কলকারখানা খুলতে হবে। বন্ধ চটকল ও চা বাগান খুলে শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে হবে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মজুরি দিতে হবে। ধনকুবেরদের ট্যা’ ছাড় না দিয়ে অতিরিক্ত ট্যা’ বসিয়ে বন্ধ শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।
৮। নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কেবলমাত্র অনুদান দেওয়া নয় – স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের শূন্যপদ পূরণ করতে হবে এবং শিক্ষক পদে নিয়োগ সহ চাকুরির নির্বাচন ও নিয়োগে চূড়ান্ত দুর্নীতি ও দলবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯। সরকারি অর্থের ব্যাপক আত্মসাৎ ও অপচয় বন্ধ করে গরীব মানুষের প্রকৃত সাহায্য হয় এমন প্রকল্প রচনা করতে হবে। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের স্রোত বন্ধ করতে সারা বছরের কাজ সৃষ্টি করতে হবে। সম্প্রতি কেরালায় নিহত রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যরাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভূক্ত করে সরকারগুলির সাথে কথা বলে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।
১০। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুন্দরবন সহ সমুদ্রতীরবর্তী জনবসতিকে রক্ষা করার জন্য স্থায়ী নদীবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

১১। দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনকে নির্বাচন সহ সমস্ত ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিরুদ্ধ মতকে দমন, বিরোধীদের মানসিক ও দৈহিক নির্যাতন বন্ধ করে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
১২। সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ-এর দাম কমাতে হবে। সার-বীজ-কীটনাশকের দাম কমাতে হবে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও কম সুদে সহজে কৃষিঋণ দিতে হবে।
১৩। আশা-আইসিডিএস -পৌর স্বাস্থ্যকর্মী-মিড ডে মিল-নির্মাণকর্মী-বিড়ি শ্রমিক-মোটরভ্যান চালক সহ সর্বস্তরের অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবি অবিলম্বে মানতে হবে।
১৪। দেউচা-পাঁচামিতে আদিবাসিদের জোর করে উচ্ছেদ করা চলবে না।
১৫। বাস সহ পরিবহনের যেমনখুশি ভাড়া বাড়ানো চলবে না।

১৬। প্রভাবশালী মহলকে আড়াল না করে আনিস খান হত্যার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দ্রুত শেষ করে দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
১৭। শ্রমিক বিরোধী শ্রমকোড বাতিল করতে হবে। সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের বেসরকারিকরণ চলবে না। ধনকুবেরদের অধিক মুনাফার স্বার্থে জলের দরে সরকারি সংস্থা হস্তান্তর করা চলবে না। সমস্ত নন-পারফর্মিং অ্যাসেট উদ্ধার করতে হবে।
১৮। পেট্রোল- ডিজেল- রান্নার গ্যাসের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি চলবে না, অবিলম্বে দাম কমাতে হবে।
১৯। প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের সুদের হার কমানো চলবে না।

দলের তরফে জানানো হরেছে, বহু আগে জানানো সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের কোন মন্ত্রী দেখা করার সময় পাননি। মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি প্রথমে বিধানসভায় দেখা করবেন জানালেও পরে ব্যস্ততার কথা জানিয়ে প্রতিনিধিদলের সংগে দেখা করেননি। ফলে একটি স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে। শুরুতে হেঁদুয়া পার্কের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আরও দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *