পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ নভেম্বর: তিন দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হলো মেদিনীপুর কলেজের (স্বশাসিত) ১৫৩তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। মাঠভর্তি পড়ুয়াদের হর্ষধ্বনি, দৌড়ের ট্র্যাকে গতির লড়াই আর শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার আবহে এই সমাপ্তি অনুষ্ঠান কেবল ক্রীড়ানৈপুণ্যের উদযাপন ছিল না, বরং তা কলেজের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
দীর্ঘ দু’বছরেরও বেশি সময় পর এ দিনই কলেজের স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন ডঃ অসিত পন্ডা, যা উৎসবের আমেজকে এক অন্য মাত্রা দেয়। এদিন সকাল থেকেই কলেজ মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর কলেজের পতাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শ্রী সত্যরঞ্জন ঘোষ। তাঁর হাত ধরেই প্রজ্জ্বলিত হয় মশাল, যা তিন দিনের ক্রীড়া যজ্ঞের সমাপ্তি পর্বের সূচনা করে। শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল মার্চ পাস্ট অনুষ্ঠানে যোগ করে এক আলাদা গাম্ভীর্য। পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সুমন মাহাতো শপথবাক্য পাঠ করান এবং শ্রী ঘোষ তাঁর স্বাগত ভাষণে ক্রীড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ (আইএএস)। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, “হার-জিত খেলার অঙ্গ, কিন্তু তার চেয়েও বড় হলো ক্রীড়াসুলভ মনোভাব। এই মনোভাবই জীবনে এগিয়ে চলার পাথেয়।“ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রাক্তনী তথা জাতীয় স্তরের প্রাক্তন ফুটবলার শৈবাল বসু। তিনি নিজের খেলোয়াড় জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে ছাত্র- ছাত্রীদের উৎসাহিত করেন।
মোট ৬১টি ইভেন্টের অধিকাংশ গত দু’দিনে সম্পন্ন হলেও, শেষ দিনের আকর্ষণ ছিল টানটান উত্তেজনার কয়েকটি ইভেন্ট। বিশেষ করে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং ৪x১০০ মিটার রিলে রেসকে কেন্দ্র করে পড়ুয়াদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। দৌড়ের শেষে জয়-পরাজয়ের আবেগে ভাসতে দেখা যায় প্রতিযোগীদের।
তবে দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায় ছিল শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য আয়োজিত ইভেন্টগুলি। একদিকে যেমন ছিল টানটান উত্তেজনার দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতা, তেমনই হাসি-ঠাট্টার আবহে জমে ওঠে ওয়াকিং রেস এবং পাসিং দ্য বল প্রতিযোগিতা। এই ইভেন্টগুলিতে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে শিক্ষাকর্মী এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কলেজ প্রাঙ্গণে এক পারিবারিক ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ তৈরি করে।

এই আনন্দময় পরিবেশেই দিনের দ্বিতীয়ার্ধে ক্রীড়াঙ্গনে আসেন ডঃ অসিত পন্ডা, যিনি আজ প্রথমার্ধে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন শূন্য থাকার পর স্থায়ী অধ্যক্ষ পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত কলেজের সব মহল। অধ্যক্ষ হিসেবে কার্যভার নিয়েই তিনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করেন। নতুন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজ আগামী দিনে এক নতুন পথে এগিয়ে চলবে, এই আশাতেই শেষ হলো এবারের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।

