সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ জুলাই: ভুয়ো এসটি শংসাপত্র জমা দিয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন জুহি কোলে নামে এক পড়ুয়া। এমনকি গত চার বছর ধরে সেখানে ডাক্তারি পড়াশোনাও করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে চার বছর পড়ার পর ওই শংসাপত্র জাল বলে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই প্রতারণার ঘটনায় ছাত্রীটির বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানাগেছে, যে গত ২০২২ সালে নিট উত্তীর্ণ হয়ে এসটি সংরক্ষিত আসনে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন জুহি কোলে নামে ছাত্রীটি। ছাত্রীর পদবী ও জাতিগত শংসাপত্র দেখে সন্দেহ হয় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। ওই শংসাপত্র জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ইস্যু হওয়ায় সেখানের মহকুমা শাসকের কাছে তা যাচাইয়ের জন্য পাঠায় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ। ওই শংসাপত্র যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরেও। সম্প্রতি দুই দফতর থেকেই জানানো হয় জুহি কোলের ব্যবহার করা শংসাপত্র জাল।এবিষয়ে আন্দোলনে নামে আদিবাসীরা। আদিবাসীরা ডাক্তারির চতুর্থ বর্ষে পাঠরতা ওই ছাত্রীকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবিতে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের অভিযোগ, জুহির জন্য আদিবাসীদের পড়ুয়ারা উপেক্ষিত হয়েছে। তাকে চরম শাস্তি দিতে হবে। চাপে পড়ে অবশেষে সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ওই ছাত্রীকে বহিষ্কারের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজকে নির্দেশ দেয়। ওই ছাত্রীকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানাতেও লিখিত অভিযোগ জানায় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনার পর বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। ওই ছাত্রীটি কীভাবে জাল জাতিগত শংসাপত্র পেলেন? তার পিছনেও রাজ্যে কোনও জালিয়াতি চক্র সক্রিয় রয়েছে? কোনো প্রভাবশালী এই জালিয়াতির পিছনে আছে কিনা? কোনো আর্থিক লেনদেন আছে কিনা? সেগুলি খতিয়ে দেখার দাবি জানায় আদিবাসীরা। তাছাড়া ওই ছাত্রীর শংসাপত্র জাল না আসল তা খতিয়ে দেখতে কেন দীর্ঘ চার বছর সময় লাগল? এক্ষেত্রেও কি ছাত্রীকে বা প্রভাবশালিদের বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছিল? সে বিষয় তুলেও সরব আদিবাসীরা। এবিষয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন যে, ছাত্রীটি গত ২০২২ সালের শেষের দিকে ভর্তি হয়েছিল। পরে দেখা যায় সার্টিফিকেট যেটা জমা দিয়েছিল সেটা সন্দেহজনক। স্বাস্থ্য ভবনের নজরেই তদন্ত হয়। সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ এসে যায়। সেই নির্দেশ আসামাত্র ওই ছাত্রীকে কলেজ থেকে সরানো হয়েছে।
এনিয়ে মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিরোধীরা এনিয়ে সরব হয়েছেন। তাদের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষা, প্রশাসন ও চিকিৎসা বিভাগের সর্বত্র গোলমাল, আর সেটাই প্রমানিত। সেজন্য শংসাপত্র যাচাই করতেই চার বছর লাগল। এক্ষেত্রেও বিচারের নামে প্রহসন হবে।