রাজেন রায়, কলকাতা, ২৩ জুলাই: আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজের সংগঠনে ব্যাপক রদবদল করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মঙ্গলবার ২১ জুলাইয়ের সভাতেই। প্রত্যাশামতোই রাজ্য থেকে জেলাস্তরে ব্যাপক রদবদল ঘটালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ২০১৯ লোকসভার শক্তিক্ষয় ঝেড়ে ফেলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে, এদিনের সংগঠনের খোলনলচে বদলে তা পরিষ্কার হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সব জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের ভিডিও কনফারেন্সে ডেকে বৈঠক করেন তিনি। জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দুলাল মুর্মু, মহুয়া মৈত্র, পার্থপ্রতিম রায়, শ্যামল সাঁতরা, গুরুপদ টুডু একাধিক নতুন যৌবনকে তিনি দলের মুখ্য সারিতে নিয়ে এসেছেন। বাদ দিয়েছেন অরূপ রায় থেকে অর্পিতা ঘোষের মত অনেককেই। আবার সদ্য বিদ্রোহী ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের পর মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। সফল ভাবে সামলানোর পর এবার তাঁকেই গোটা নদিয়া জেলার সভাপতি করা হল। গোষ্ঠী কোন্দলে বিদীর্ণ কোচবিহার জেলা সভাপতি পদে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে সরিয়ে আনা হল প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। হাওড়়া জেলা (শহর) সভাপতি পদ থেকে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে।
জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়াতেও সভাপতি বদল করেছেন দিদি। শুভাশিস বটব্যালের জায়গায় বাঁকুড়ার সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে। পুরুলিয়ায় শান্তিরাম মাহাতোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গুরুপদ টুডু, যিনি রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী। ঝাড়গ্রামের সভাপতি পদ থেকে বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুলাল মুর্মুকে। বীরবাহাকে ঝাড়গ্রামের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।জঙ্গলমহল থেকে ছত্রধর মাহাতো, সুকুমার হাঁসদা ও চূড়ামণি মাহাতোকে রাজ্য কমিটিতে আনা হয়েছে। এতদিন পর ছত্রধর মাহাতোকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারাই।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের জেলা সংগঠনে ‘চেয়ারম্যান’ নামে এক নতুন পদ তৈরি করা হল। উত্তর কলকাতার চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, উত্তর ২৪ পরগনার চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে পাণিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষকে, দার্জিলিং জেলার চেয়ারম্যান করা হয়েছে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে।
উত্তরবঙ্গের কেবল দুটি জেলাতেই সভাপতি বদল করেছেন দিদি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি পদ থেকে অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গৌতম দাসকে। কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি হয়েছেন পার্থপ্রতিম রায়। উনিশের লোকসভা ভোটে এই জেলায় আশানুরূপ ফল না হওয়াতেই এই রদবদল বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিন তৃণমূলের যুব সংগঠনেও রদবদল ঘটিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সংগঠনে নতুন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সাত জনকে সদস্য করা হয়েছে,- সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শান্তা ছেত্রী।

