সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৮ ডিসেম্বর:
হরিয়ানায় বেশ কয়েক বছর আগে ছোট্ট প্রিন্সের কুয়োতে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছিল। সেনাবাহিনীর লড়াইয়ে সেই ছোট্ট শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হলেও বাঁশদ্রোনী থানা এলাকার সোনালী পার্ক এলাকায় কুয়োয় পড়ে যাওয়া যুবকের উদ্ধার হল নিথর দেহ। তাও ১৮ ঘন্টার চেষ্টাতেও ওই যুবককে উদ্ধার করতে পারেনি দমকল। শেষমেশ স্থানীয় পাতকুয়ো মিস্ত্রিই উদ্ধার করেন সম্রাট সরকার (২৮) নামে যুবকের দেহ।
উদ্ধারকারীদের দাবি, উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় একাধিক সরঞ্জাম ছিল। তবে কুয়োর বেড় সংকীর্ণ হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। তাই সঠিক সময়ে ওই যুবককে উদ্ধার করা যায়নি।
ওই যুবক পাড়ায় বাপি নামে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মৃগীরোগের শিকার ছিলেন ওই যুবক। সেই কারণেই সম্ভবত তাঁর কোনও কর্মসংস্থান ছিল না। বিয়েও করেননি তিনি। শুক্রবার কুয়োর পাশে স্নান করছিলেন বাপি। তখনই অসতর্কতায় টাল সামলাতে না পেরে ৫০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে যান বাপি। গোটা ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আশপাশের মানুষ তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এরপর খবর দেওয়া হয় দমকলে। দমকলের একের পর এক ইঞ্জিনের পাইপ দিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দমকলের একজন প্রশিক্ষিত যুবককে নামানো হলেও তিনি ৩০ ফুট নেমে শ্বাসকষ্টে আবার ওপরে উঠে আসেন। তার চিৎকারেও সাড়া দেননি সম্রাট।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ কুয়োর ভিতর থাকতে থাকতে অক্সিজেনের অভাব ও ঠান্ডায় নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সম্রাট। অবশেষে বাধ্য হয়ে দমকল পাম্প চালিয়ে কুয়োর জল বের করার কাজ শুরু করে। কিন্তু বাপির দেহ আটকে গিয়েছিল কুয়োর নিচের পাঁকের মধ্যে। ফলে সেখান থেকে দেহ উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের।
এছাড়াও কুয়োর বেড় ছিল যথেষ্ট সংকীর্ণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই একাধিক সরঞ্জাম থাকলেও সেভাবে কাজ করতে পারেনি। এরপর শনিবার সকালেও জল ছেঁচে ফেলার কাজ শুরু হয়। কুয়োয় নামে পাতকুয়ো মিস্ত্রি মেঘনাদ সরকার ওই কুয়োয় নামেন। মাটি কেটে মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাপির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ নিহতের পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সামান্য একজন পাতকুয়ো মিস্ত্রির যে প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেই প্রশিক্ষণও দমকলের নেই। বাপিকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রথমেই পাতকুয়ো মিস্ত্রির সাহায্য নিলে এমন অঘটন ঘটত না। আপাতত বাপির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তারপরই তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।