আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৭ জুন: বাঁকুড়ায় টাকা চেয়ে এবার হুমকি চিঠি। এই চিঠির শেষে প্রেরক হিসাবে লেখা ‘ইতি মাওবাদী’।
বাঁকুড়া জেলায় টাকা চেয়ে হুমকি চিঠি নজির বিহীন। মাওবাদী নামাঙ্কিত এই চিঠি পাঠানো হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের এক বুথ সভাপতির নামে। এই চিঠিতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার জায়গা ও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মাওবাদী নামাঙ্কিত চিঠি ঘিরে বাঁকুড়া জেলায় শুরু হলো শোরগোল। সোমবার সাদা কাগজের উপর লাল কালীতে লেখা ওই চিঠি পেয়েছেন বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুর গ্রামের তৃণমূলের বুথ সভাপতি দ্বিজপদ মিশ্র। চিঠিতে নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট সময়ে ৫০ হাজার টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় দুই নাতিকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং বুথ সভাপতিকে গুলি করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
দ্বিজপদ মিশ্রর দাবি, রবিবার রাতে তিনি যখন নিজের বাড়িতে শুয়েছিলেন সেই সময় ঘরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে সাদা কাগজে লেখা চিঠি গলিয়ে ঘরের মধ্যে ফেলা হয়। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই চিঠি দেখতে পান বন দফতরের প্রাক্তন কর্মী তথা তৃনমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি দ্বিজপদ মিশ্র। চিঠিতে চৌঠা আগষ্ট রাত সাড়ে এগারোটার সময় দ্বিজপদ মিশ্রকে মাওবাদী ফান্ডের জন্য স্থানীয় একটি পুকুরের ঘাটে ৫০ হাজার টাকা নামিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় দ্বিজপদর দুই নাতিকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং দ্বিজপদকে রাস্তায় গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে চালাকি করা বা পুলিশকে জানাতে নিষেধ করা হয়েছে। চিঠির একেবারে নিচের অংশে লেখা রয়েছে ইতি মাওবাদী। চিঠিতে লেখার ধরণ দেখে বিষয়টিকে সেভাবে আমল দেননি দ্বিজপদ মিশ্র। পুলিশও বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পুলিশ ওই চিঠির সত্যতা বা উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।
খাতড়া মহকুমার এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, এলাকায় ‘মাওবাদীদের’ প্রভাব নেই। স্থানীয় কারও কাজ হতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এপ্রেক্ষিতে উল্লেখ্য্য, সম্প্রতি “সিভিক, প্রধান এবার তোমাদের পালা” এভাবে সিভিক কর্মী ও পঞ্চায়েত প্রধানদের হুঁশিয়ারি দিয়ে পোষ্টার পড়ার ঘটনা ঘটেছিল জেলার তালডাংরা বাজারের। সাদা কাগজের ওপর লাল কালিতে হাতে লেখা এই পোষ্টারগুলির নিচে সিপিআই (মাওবাদী) লেখা রয়েছে।তালডাংরা থানার কাছে, তৃণমূল কার্যালয় এলাকায় এবং বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির বাড়ির কাছে এই পোষ্টারের পড়েছিল। পোষ্টারগুলিতে “কিষেনজি, সুনীল মাহাতো এবং রিমিলের মৃত্যুর বদলা চাই। জল জমি জঙ্গল আদিবাসী এদের উচ্ছেদ করা চলবে না সিভিক প্রধান এবার তোমাদের পালা ” বলে লেখা ছিল। তার পরই এই হুমকি চিঠি।
একসময় বাঁকুড়া জেলর জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাওবাদীরা সক্রিয় থাকলেও তালডাংরা বাজার এলাকায় উপস্থিতি নজির ছিল না। কখনোই মাওবাদীদের পোষ্টার পাওয়া যায় নি। তালডাংরা এলাকায় মাওবাদী পোস্টার পড়ার ঘটনা নজির বিহীন। এরকম টাকা চেয়ে হুমকি চিঠি পাঠানোও নজির বিহীন। তাই এদুটি বিষয় নিয়ে রহস্য দানা বেঁধগেছে।