করোনা আবহে জৌলুস ছাড়াই হবে আশকোলা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মনসা পুজো, বন্ধ ‘ঝাঁপান উৎসব’

অমরজিৎ দে, ঝাড়গ্রাম, ১৭ অক্টোবর: করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২নং ব্লকের আশকোলা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসা মনসা পুজা হবে এবছর নিয়ম রক্ষার পুজো। এই পুজা উপলক্ষ্যে আজও পুরোনো রীতি মেনেই এই এলাকায় পুজিতা হয়ে আসছেন মনসা দেবী। আশকোলা গ্রামবাসীবৃন্দের পরিচালনায় হয় এই পুজো। এই গ্রামে পুজো ছাড়াও লোকজনের সমাগম হয় ‘ঝাঁপান’ দেখতে। “ঝাঁপান”- এর অর্থ সাপের খেলা। এই ঝাঁপান দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। ঘট উত্তোলনের পর ঘটের সামনে সাপের খেলা দেখিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে মন্ডপে পৌঁছান৷ সাপের খেলা দেখাতে আনা হয় বাইরে থেকে সাপুড়ে৷ সেই সাপুড়ে সাপের খেলা দেখাতে প্রায় ১০-১৫ টি বিষধর সাপ নিয়ে আসেন৷ সেই সাপগুলোকে সাপুড়ে কখনও মুখে ঢুকিয়ে, কখনও বা ৩/৪টে সাপ একসাথে নিয়ে গলায় জড়িয়ে হাত দিয়ে টানা এক চাকা লাগানো এক গাড়ির উপর এই সব খেলা দেখান। এই খেলা দেখতেই মেতে উঠে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই।

এই প্রসঙ্গে গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা বল্লভ বাগ, শশাঙ্ক পাল ও শক্তিপদ পাল’রা বলেন, “এটি আমাদের একটি প্রাচীন রীতি। সাপের খেলা দেখানোর পরই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” বৈকুণ্ঠ দাস নামে একজন ব্যাক্তির হাত ধরেই এই পূজার সুত্রপাত হয় এই গ্রামে। ওই ব্যক্তির স্বপ্নাদেশ থেকেই এই পুজো শুরু হয়। ২টি ঘট বসানো হয় এই পুজোয়। কেবলমাত্র আশকোলা গ্রামের পুজোতেই এই রীতি লক্ষ্য করা যায়। কারণ জানতে চাইলে বৈকুন্ঠ দাসের বংশধর দেবাশীস দাস বলেন, “বৈকুণ্ঠ দাস যখন আশকোলা গ্রামে পুজো শুরু করেন তারপরে একবছর গ্রামের নদী থেকে ঘট তুলে আনার সময় হঠাৎ ভেঙ্গে গিয়েছিল ঘটটি। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সবাই পরামর্শ নিতে যেত চোরচিতা গ্রামের এক মহারাজের কাছে। এবং সেই মহারাজ জানান আপনাদের পুজোতে আপনারা ২টি ঘট তুলবেন ঘট পুজোর স্থানে পৌঁছে যাওয়ার একটা মনসা মায়ের ঘট ও আর একটা শিতলা মায়ের ঘট হিসেবে প্রতিস্থাপন করবেন। এই গ্রামের পূজোতে কোনো পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না। যাঁরা এই পুজোটি শুরু করেছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যের হাতেই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” এই পুজোর সঙ্গে মা লক্ষ্মী ও সরস্বতিও পুজো হন। কারণ যানতে চাইলে তিনি বলেন, পুজোর ঘট আনতে যাওয়ার আগের দিন রাতে গিয়ে যেই জায়গায় ঘট উঠানো হবে সেই জায়গা টা চিহ্নিত করে রেখে আসতে হয়। একবছর সেই ঘাট চিহ্নিত করতে যাওয়া গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ একজন আমিশ খেয়ে ছিলেন। তারপর থেকেই সেই ভূল স্বরূপ আজও মনসা মায়ের সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতি কেও পুজো করতে হয়। এই পুজো দু’দিন ধরে হয় এবং দ্বিতীয় দিনের পুজোতে সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এছাড়াও গ্রামের স্থায়ী মন্ডপে পুজো করার পর প্যান্ডেলে পুজিতা হন মনসা বুড়ি।

গ্রামবাসী অম্বুজ বাগ, বুবুল বাগ ও শিবশঙ্কর দেহুরী’রা বলেন,”গ্রামের ছোটো বড় সবাই এই পুজোতে মেতে ওঠে। সাপের খেলা আর পুজো ছাড়াও সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন যাত্রা ও অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সমস্ত অনুষ্ঠান ও ঝাঁপান উৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার জন্যই হবে পুজো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *