আশিস মণ্ডল, বোলপুর, ২৮ জুলাই: “বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা আসতে চায় তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কারও কাছে ভিক্ষা আমরা চাইব না। রাজ্যে ফিরে এলে তাদের কর্মশ্রী প্রকল্পে সবার জব কার্ড করে কাজ দেওয়া হবে। বাড়ি না থাকলে ক্যাম্প করে দেওয়া হবে।”
সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেন রাজ্যসভার সংসদ সামিরুল ইসলাম এবং মন্ত্রী মলয় ঘটককে। মমতা বলেন, “২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। কিছু দালালের পাল্লায় পড়ে তারা বাংলার বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু অত্যাচারের সময় তারা থাকছে না। দরকার নেই আমার বাইরে কাজ করে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষায় কথা বললেই মারছে। এরা শিশু থেকে মহিলা কাউকে ছাড়ছে না। হরিয়ানা, গুরগাঁওতে ১০ টা ডিটেনশন ক্যাম্প করে আটকে রাখা হয়েছে। মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলে স্কিম তৈরি করে যারা আসতে চায় তাদের আমরা ফিরিয়ে আনবো। তারা ফিরে এলে, বাড়ি থাকলে ভালো, না হয় ক্যাম্প করে দেব। এরপর তাদের রেশন কার্ড, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড করে দেওয়া হবে। প্রত্যেকের জব কার্ড করে দেওয়া হবে, যাতে তারা কাজ পায়। কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলা আবাস, রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবু রাজ্য ওই প্রকল্প নিজেই চালাচ্ছে”।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাতেও দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে অন্য রাজ্যের। আমার কিন্তু তাদের সঙ্গে সেরকম ব্যবহার করি না।”
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে জেলা শাসক এবং বিএলও’দের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে মমতা বলেন, “রাজ্য থেকে একহাজার লোক দিল্লি নিয়ে গিয়েছে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি জানতাম না। জেলা শাসকদের উচিত ছিল আমাকে, কিংবা মুখ্যসচিবকে জানানো। কিন্তু আপনারা আমাদের না জানিয়ে হুটহাট করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কখনো তো এই জিনিস হয়নি। ভয় দেখাচ্ছে? ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকুন। মানুষের স্বার্থে সব সময় কাজ করে যেতে হবে।”
বিএলওদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা দেখবেন ভোটার তালিকা থেকে কারও নাম যেন বাদ না যায়। মনে রাখবেন নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশের পর নির্বাচনের দায়িত্ব কমিশনের হাতে যায়। তার আগে রাজ্য সরকার, পরে আবার রাজ্য সরকার। সুতরাং আপনারা মনে রাখবেন চাকরি করেন রাজ্য সরকারের অধীনে। কোনো মানুষকে অযথা হয়রানি করবেন না। দীর্ঘদিন যারা ভোটার তাদের অস্তিত্ব আছে কিনা দেখবেন।”
পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদকে মমতার নির্দেশ ‘বড় কাজ সরকার করবে। আপনারা ছোট ছোট কাজগুলো করুন। বিল্ডিং বেশি বানাবেন না। রাস্তা, আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা করুন। স্কুল কিংবা আইসিডিএস সেন্টারের ছাদ ফুটে জল পড়লে সেটা মেরামত করুন।”
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বীরভূম জেলার জন্য
১৩৫০টি প্রকল্পের মধ্যে ১২২৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯১ শতাংশ। ১২৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি সময়ে। তার মধ্যে ৪৬টি শিক্ষা দফতরের কাজ”।
জেলা শাসককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলে, “বীরভূম জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। কর্মশ্রী প্রকল্পে বীরভূম সব থেকে কম ৩২ দিন কাজ
পেয়েছে”।
কয়লাখনি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “দেউচা পাঁচমিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এতে লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি দেউচা। ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করে এলাকার উন্নয়ন করা হবে। হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। ৩১৪ একর জমিতে কালো পাথর তোলার জন্য ই-টেন্ডার করা হচ্ছে। খয়রাসোলের বিনোদপুরে ১৩৪৭ একর জমির উপর কয়লা উত্তোলনের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে প্রসপেক্টিভ মাইনিং লিজ দেওয়া হয়েছে। জয়দেব কোল ব্লকে মাইনিং লিজ দেওয়ার প্রসেস চলছে।”
অনুব্রত মণ্ডলের নাম নিয়ে মমতা বলেন, “আমোদপুর সুগারমিলেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করা হবে। তাতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কেষ্ট আমাকে এনিয়ে কয়েকবার বলেছে।”
জল্পনা ছিল এদিনের সভায় অনুব্রত মণ্ডলকে ডাকা হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রথম সারিতে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট।