আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১৯ ডিসেম্বর: অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিয়ে দেশদ্রোহীতার কাজ করছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে বিজেপি আয়োজিত মিছিল এবং পথসভায় যোগ দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এদেশে আসা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মুসলমান ও অন্যান্যদের কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব দিয়েছে। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে সারাদেশ। আমরাও এই মেদিনীপুর শহর থেকে কেন্দ্র সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এতদিন রাজ্যে গ্রামেগঞ্জে কাটমানির সঙ্গে নারী হরণ, নারী ধর্ষণ ও গুন্ডাগিরি মদের ভাটি ও কারখানা এবং লুঙ্গি নাচ দেখেছি। এই লুঙ্গি বাহিনী ট্রেন ভাঙ্গছে, স্টেশন ভাঙ্গছে, আগুন লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট করছে। এরা কারা, এরা কোথা থেকে এসেছে, তা চিহ্নিত করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কোনও ভারতীয় নাগরিক ভারতের সম্পত্তি নষ্ট করতে পারে না। আমরা জানি যাদের জন্য নাগরিক পঞ্জি প্রয়োজন তারা এ কাজ করছে। এনআরসি চালু করা হচ্ছে কারা দেশের নাগরিক আর কারা বিদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করে এদেশে উৎপাত করছে তা চিহ্নিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি জরুরী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, যে বিল পাস হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে, দেশের স্বার্থে আমি এবং আমরা তার পক্ষে ভোট দিয়েছি। কিন্তু শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারী দুপক্ষের ভোট পাওয়ার জন্য দিদির সাংসদরা কেউ ভোট দিতে যাননি। স্বাধীনতা বিপ্লবীদের পরিবারগুলি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন জায়গার রেল লাইনের ধারে বসবাস করছে অসহায় ভাবে। হিন্দু হওয়ার জন্য তারা পালিয়ে বনে জঙ্গলে রয়েছেন। অখন্ড ভারতবর্ষ ছিল তাদের নিজের দেশ। বিজেপি সত্তর বছর ধরে তাদের নাগরিকত্ব দাবি করে আসছে। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা মনমোহন সিং, অশোক গেহলট, ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন। তাদের ইচ্ছা অনুসারে ভারতীয় নাগরিকত্ব সেই সমস্ত উদ্বাস্তুদের আমরা দিয়েছি। আর তার বিরোধিতা করা হচ্ছে বাংলায়।
মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, কথায় কথায় উনি রাস্তায় নামেন, ঘরে থাকার অভ্যাস নেই। ঘুরে বেড়ান রাত দিন। কিন্তু এইসব উদ্বাস্তুদের কথা তিনি কখনো বলেননি। বিধানসভায় সেই কথা বলতে গেলে তিনি বলেছেন এসব কথা বলবেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তার কথাতেই বুঝেছি ওপারের দিদিমণি আর এই দিদিমনির বোঝাপড়াটা কতখানি। এত ভাব যখন- হিন্দুদের তখন আপনি সম্মান করবেন কিভাবে? এজন্যই লোকসভা নির্বাচনে ওই সব হিন্দুদের দু কোটি ভোট আমরা পেয়েছি। যার ফলে দুই থেকে আঠারো হয়েছে। আর দিদিমণিদের বিয়াল্লিশের স্বপ্ন ভেঙে বাইশ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় কুড়ি বছর লোকসভায় ছিলেন। এইসব উদ্বাস্তুদের জন্য একবারও একটা কথাও বলেননি। হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কথা বলতে ওনার বুক কাঁপে। এ রাজ্যে এক কোটি অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন তাদের তাড়িয়ে দিলে দিদিমণি সেই ভোট পাবেন না। নির্বাচনে হেরে যাবেন। তাই তাদের আগলে রাখার জন্য বিরোধিতা করা। সব জায়গায় হিসাব করে চলেন উনি। কেন্দ্র এ রাজ্যে এক টাকা কেজি দরে চাল পাঠাচ্ছে আর উনি দু টাকা করে বিক্রি করে এক টাকা করে প্রতি কেজিতে ঝেড়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া উনি গত লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তা তো আর হল না। তাই উনি এই রাজ্যটিকে বাংলাদেশ বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছেন। কিন্তু বিজেপি তা হতে দেবে না।
বিয়াল্লিশ থেকে বাইশে নামিয়ে এনেছি। বিজেপি স্লোগান দিয়েছে উনিশে হাফ একুশে সাফ। এজন্য মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল হয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগে না উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন। যিনি হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট কিছুই মানেন না রাজ্যপালকে কালোপতাকা দেখাতে পারেন এগুলো সকলই রাষ্ট্রদোহিতার কাজ। কেন্দ্র যা করবে কিছুই মানবো না। বাংলাদেশ পাকিস্তান এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখব। কেন্দ্রের সঙ্গে থাকবো না। এর থেকে বড় রাষ্ট্রদ্রোহিতার আর কি আছে। সারদার টাকা নারোদার টাকা যখন বস্তা বস্তা মাটির নিচে পচে গেল তখন উনি রাস্তায় নামলেন। এখন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেরকে তাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, উনি রাস্তায় নেমেছেন। এগুলি সকলি দেশবিরোধী কাজের একটি উদাহরণ। তাই আমাদের দেশদ্রোহীতা খতম করতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে এই সমস্ত কাজের। এদেশের মুসলমানদের বদনাম করতে অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিয়ে ট্রেন স্টেশন কেন্দ্রীয় সম্পত্তিতে ভাঙ্গচুর চালানো হচ্ছে আগুন লাগানো হচ্ছে। সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দেখতে যাওয়ার সময় খগেন মুর্মু ও নিশীথ প্রামাণিক এই দুই সাংসদকে গ্রেফতার করল দিদির পুলিশ। কিন্তু যারা তিনদিন ধরে তাণ্ডব চালালো তাদের গ্রেফতার করা হলো না। দেশের সম্পত্তি নষ্ট করার ক্ষেত্রে এগুলো দেশদ্রোহীতারই লক্ষণ।