তারক ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ৪ জানুয়ারি: ঝালমুড়ির ঝাঁঝ আগেই উবে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুপ্রিয় বড়ালকে (বাবুল) বাকি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে একই বন্ধনীতে রেখে বারবার তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এবার ফিসফ্রাইয়ের স্বাদও যে মিইয়ে গিয়েছে, শনিবার কার্যত তা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক বিজেপি-বিরোধিতার রেওয়াজ ছেড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিশানা করলেন বামেদেরও।
এই তোপ দাগতে, কবর খুঁড়ে তৃণমূল সুপ্রিমো তুলে আনলেন ২০০১ সালে হওয়া ছোট আঙারিয়া গণহত্যার ঘটনা। ওই বছর ৪ জানুয়ারি, ছোট আঙারিয়া গ্রামে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন প্রধান শাসক দল সিপিএম অভিযোগ করে, ওই গ্রামের এক বাড়িতে কিছু উগ্র বামপন্থী যুবকের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের সমঝোতা বৈঠক চলছিল। যাতে, মেদিনীপুর জেলায় বামেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। শেষ পর্যন্ত সিপিএম সমর্থকরা ওই বাড়িতে উপস্থিত প্রায় সকলকেই হত্যা করেন এবং বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই ঘটনার স্মরণে শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল সুপ্রিমো লিখেছেন, ‘ছোট আঙারিয়ায় ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি, তৃণমূল কর্মীদের খুন করা হয়েছিল। অমর শহিদদের জানাই অন্তরের শ্রদ্ধা। ৩৪ বছরের বাম জমানায় রক্তস্নাত রাজনীতির বলি সমস্ত শহিদদের জানাই প্রণাম।’ তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ছোট আঙারিয়ার ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর চড়ানোর মধ্যে নতুন কিছু নেই। ওই ঘটনার পর থেকেই দল প্রতিবছর ছোট আঙারিয়া দিবস পালন করে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই কথা মানলেও বিভিন্ন মহলের মত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নিশানা বদলের পিছনে, বামেদের পুনরুত্থানের চেষ্টাও অনেকাংশে কাজ করেছে। কারণ, সম্প্রতি বাম-কংগ্রেস যৌথ লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর, যৌথ কর্মসূচিগুলো ভালো সমর্থক টানছে বলেই নানা সূত্রে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সর্বভারতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখে, শুক্রবার কাশ্মীরে দলের বিধায়ক ইউসুফ তারিগামিকে কলকাতায় এনেছিল সিপিএম। সেই অনুষ্ঠানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও তোপ দেগেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, রাজ্যের এই টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বামেদের পুনরুত্থানের এই সব চেষ্টা দেখেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তৃণমূল সুপ্রিমোও। সেই কারণেই তিনি ছোট আঙারিয়ার ঘটনা টেনে অতীতের মতোই নিশানা করলেন বামেদের।