আমাদের ভারত, ৬ নভেম্বর: সোমবার ‘সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি’ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবিকে সামনে রেখে কলকাতায় বিক্ষোভ-মিছিল ও অবস্থান-বিক্ষোভ করে। কয়েক হাজার স্বাক্ষর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গণস্মারকলিপি’র কর্মসূচি নেয়। শুরুতে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে এক প্রতিবাদ মিছিল এসপ্ল্যানেডের ওয়াই চ্যানেলে যায়।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়, “সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত-বঞ্চিত-শোষিত সম্প্রদায়ের অন্যতম হল গৃহ পরিচারিকারা। এদের না আছে কোনও সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো, না আছে কাজের সময়সীমা। সপ্তাহান্তে ছুটি এবং সর্বোপরি যথার্থ কোনও সামাজিক সুরক্ষাও এদের কাছে অধরা। সরকারের বহু ঘোষিত ‘সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে’র দরজা এদের কাছে কার্যত বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যারা অনেক কষ্ট করে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে তারাও সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না।
এরপর কোনও কোনও কর্মক্ষেত্রে রয়েছে সম্মানজনক কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তার চূড়ান্ত অভাব। নিজের পরিবারকে দেখার সুযোগও বহু পরিচারিকার ক্ষেত্রে থাকে না বললেই চলে। অনেকের আবার বাড়িতেও অশান্তি। মদ এবং মাদক দ্রব্যের ব্যাপক প্রসার এই পরিবারগুলির একটা বড় অংশকে গ্রাস করেছে।
ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির আবহে এই সমস্যা পরিবারগুলির আর্থিক সঙ্কটকে যেমন বাড়িয়ে তুলছে, তেমনি পরিবারের মদ্যপরা পরিবার এবং পরিবেষকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে। এই আবহে বাড়ির ছোটদেরও বড় করা, মানুষ করা মুশকিল। এই পরিবেশ এবং আর্থিক সঙ্কট বাড়ির ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রোগ যন্ত্রণায় চিকিৎসাও এই পরিবারগুলির কাছে একরকম বিলাসিতা।
এই পরিস্থিতিতে গৃহ পরিচারিকাদের সংগঠন ‘সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি’ সুনির্দিষ্ট কিছু দাবির ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে বারংবার তারা তাদের দাবি তুলে ধরলেও সরকার এনিয়ে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানালেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিকা পার্বতী পাল।
সেখানকার জমায়েতে সংগঠনের সম্পাদিকা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভানেত্রী লিলি পাল, শোভা মাহাত, বুলবুল আইচ, প্রমুখ। এখান থেকে সহ-সভানেত্রী জয়শ্রী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল হাজার হাজার পরিচারিকার স্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেন। দাবিসমূহের মধ্যে ছিল –
১। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির সরলীকরণ করে সমস্ত পরিচারিকাকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে।
২। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা ছাঁটাই করা চলবে না।
৩। প্রতি সপ্তাহে এক দিন সবেতন ছুটি দিতে হবে।
৪। কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনক কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
৫। বরাদ্দ বাড়িয়ে রেশনে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল ও গম এবং বিনামুল্যে কেরোসিন তেল সরবরাহ করতে হবে।
৬। পরিচারিকা পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ছেলে-মেয়েদের বিনামুল্যে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
৭। অবিলম্বে মদ ও মাদকদ্রব্যের প্রসার বন্ধ করতে হবে।
৮। গার্হস্থ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ডিজিটাল মিটারের পরিবর্তে স্মার্ট মিটার লাগানো চলবে না।