চিন্ময় ভট্টাচার্য, আমাদের ভারত, ২ এপ্রিল: সঙ্কটে ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের এখন মাথায় হাত। ভারতের একমাত্র স্পোর্টস মার্কেট হল কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় মার্কেট। কিন্তু সবাই এই খেলার বাজারকে চেনে ময়দান মার্কেট নামে। এক ছাতার নীচে খেলাধূলা সংক্রান্ত যে কোনও জিনিস এই ময়দান মার্কেটে পাওয়া যায়। অনেকটা ‘কম দামে, পুষ্টিকরখাদ্য’-র মতো ব্যাপার। ভারতের কোথাও এমন বড় স্পোর্টস মার্কেট নেই। লকডাউনের কারণে গত ৪০ দিন ধরে এই মার্কেটের সব দোকান বন্ধ। যার ফলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে দেশের বৃহত্তম ক্রীড়াবিপণি কেন্দ্র। সব মিলিয়ে এখন আনুমানিক ৬০ কোটি টাকার লোকসানের মুখে ময়দান মার্কেট।
কলকাতা ময়দান দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের প্রাণভোমরা। এই মার্কেট থেকে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে নিয়মিত খেলাধূলার সরঞ্জাম সরবরাহ হয়। দেশের মধ্যে নাগাল্যান্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ। এমনকী, ইউরোপ থেকে শুরু করে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশেও নিয়মিত ক্রীড়া সরঞ্জাম যায় কলকাতার এই বিধান মার্কেট থেকেই। পাশাপাশি, প্রত্যেক মরসুমের শেষে ভারতে খেলতে আসা বিদেশি ফুটবলারদের মাধ্যমে বিভিন্ন মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায় ময়দান মার্কেটের স্পোর্টস গুডস।
প্রতিবছর কলকাতা লিগে নাম নথিভুক্ত করেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফুটবলার। তিন মাসের এই লিগ তাই খেলার ব্যবসায়ীদের কাছে এক বিরাট বাজার। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলায় ১২ মাস খেলার যাবতীয় সরঞ্জামও যায় ময়দান মার্কেট থেকেই। সামনেই ভারতীয় ফুটবলের মক্কা। সেখানে এই বাজারের বেচাকেনা কেমন থাকে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
লকডাউন সেই ভালো থাকাটাকেই যেন দৈত্যের মতো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়েছে। তাই দিশাহারা ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। যেমন ‘অভিষেক স্পোর্টস’-এর কর্ণধার পল্লব পাল। এই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘ক্ষতি তো সবারই হল। সমস্যা হল, লকডাউন উঠে গেলে আমরা দোকান খুলব। কিন্তু দোকান খুললেও আমরা আশার আলো দেখছি না। খেলা যদি না-হয়, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই।’
মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, ভবানীপুর ক্লাব থেকে আইএফএর পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশি ফুটবলার পল্লববাবুর বাঁধা ‘কাস্টমার’। এখন তিনি দিশাহারা। তাঁর কথায়,’পয়লা বৈশাখের দিন আমরা আগের বছরের টাকা পাই। আর সেই দিনই নতুন মরসুমের জন্য বরাত পাই। এটাই নিয়ম। এবার তো কিছুই হল না। মরসুম শেষ হওয়ার পর বিদেশি ফুটবলাররা আমার থেকে প্রচুর জার্সি, বুট নিয়ে যায়। সেটাও মোটা অঙ্কের। এবার সেটাও গেল। সমস্যায় পড়ে গেলাম।’ শুধু পল্লববাবুই নন। নুরুল ইসলাম মল্লিকের কথাই ধরা যাক। ইনি ‘মল্লিক স্পোর্টস’-এর মালিক। যার খ্যাতি ট্রফি, পদক বিক্রির জন্য। নুরুল ইসলাম মল্লিক বললেন, ‘আমার বাজার হল জেলা। সব জেলায় বিভিন্ন ব্লক, ক্লাব, স্কুলের যাবতীয় খেলার ট্রফি আমরা সরবরাহ করি। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি- এই তিন মাস আমার স্পেশ্যাল সিজন থাকে। এবার সব গেল। মনে হয় না এবার কোনও খেলা হবে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল দাদা।’
লকডাউন তাঁদের ব্যবসার জৌলুসকে যে লহমায় উধাও করে দিয়েছে, এককথায় মানছেন এই ময়দান মার্কেটের অন্য ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, লুধিয়ানা থেকে প্রতিবার প্রচুর জার্সি, জ্যাকেট আসে। এবার অর্ডার দেওয়া-নেওয়া বন্ধ। মীরাট থেকে আসে ক্রিকেট ব্যাট। সেখানেও সব অর্ডার বন্ধ। আইপিএলের বিভিন্ন দলের আদলে জার্সি ময়দান মার্কেটে পৌঁছে গিয়েছে লকডাউনের আগে। কিন্তু আইপিএল অনিশ্চিত। হাজার হাজার জার্সি তাই গুদামেই পচছে। নাইজিরিয়া, কেনিয়ার ফুটবলাররা মরসুম শেষে দেশে ফেরার সময় প্রচুর জার্সি, বুট নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশে ব্যবসা করেন। এবার তা-ও বন্ধ। এই মার্কেটের ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকার মতো।