আমাদের ভারত, ১৯ সেপ্টেম্বর: হিজাব না পরাই ছিল তার অপরাধ। তার ফলে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ইরানের ২২ বছরের তরুণী মাহশার মৃত্যুর প্রতিবাদে হিজাব জ্বালিয়ে চুল কেটে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন দেশের মেয়েরা। ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
দিন কয়েক আগেই হিজাব ছাড়া রাস্তায় বেরিয়েছিলেন ২২ বছরের ওই তরুণী। তাকে উচিত শিক্ষা দিতে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে মাহশা আমিনী নামে সেই তরুণির। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ইরানের রাজধানী শহর তেহরানে। ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন সে দেশের মেয়েরা। মাহশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হিজাব দিয়ে মাথার চুল পুরোপুরি সে ঢাকেনি। তরুণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি।
মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ইরান পুলিশ ও সরকারের উপর ক্ষুব্ধ ইরানি মহিলারা নিজেদের চুল কেটে হিজাব জ্বালিয়ে দিয়ে প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন। নেট মাধ্যম জুড়ে ভাইরাল হচ্ছে একই রকমের একাধিক ভিডিও। যেখানে ইরানের মহিলারা পুলিশের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। পুলিশ নির্যাতন করে মাহসাকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের পাল্টা দাবি, আটক হওয়া অনেক নারীদের সঙ্গে অপেক্ষা করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে আমিন। শনিবার তার শেষকৃত্যের সময় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ইরানের সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
ইরানের শরিয়া আইনে নারীরা তাদের চুল ঢেকে রাখতে এবং লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরতে বাধ্য। যারা এই আইন মানে না তারা জনসাধারণের তিরস্কার পান। পুলিশ জরিমানা করতে পারে। গ্রেফতার করতে পারে। এই বিষয়ে ইরানের এক মহিলার পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। সেই মহিলা টুইটারে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে মাহশার রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশের মহিলারা তাদের চুল কেটে দিচ্ছেন। কেউ আবার হিজাব জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। ভিডিওর নিচে তিনি লিখেছেন, সাত বছর বয়স থেকে আমরা আমাদের চুল ঢেকে রাখতে বাধ্য করা হয়। তা না হলে আমরা স্কুলে যেতে পারবো না। চাকরি পেতে পারবো না।সরকারের এই লিঙ্গ বৈষম্য মূলক শাসনে আমরা বিরক্ত।
https://twitter.com/AlinejadMasih/status/1571479790883946500?t=jEbfjUpFTmqtzUmGiFV0xg&s=08
বৃহস্পতিবার পরিবারের সকলের সঙ্গে গাড়িতে ইরানের রাজধানী তেহরানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসছিলেন ২২ বছরের মাহসা। সেই সময় তাদের গাড়ি আটকায় ইরানের নীতি পুলিশ। ইসলামিক রীতি মেনে মহিলারা পোশাক পরেছেন কিনা সেটা দেখাই ওই নীতি পুলিশদের কাজ। সেদিন গাড়িতে মাহসা হিজাব পরেনি বলে তাদের অভিযোগ।
মাহসার পরিবারের অভিযোগ, তাদের সামনেই মাহসাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজেদের গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের জেরার ১৯ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করা হয়েছে আর সেজন্যই পরিবার দাবি করেছে মাহসার মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক হতে পারে না।